গভর্নরস আইল্যান্ডে | জাহীদ রেজা নূর

লেখাটি শেয়ার করুন

Share on facebook
Share on linkedin
Share on twitter
Share on email

রোড আইল্যান্ড থেকে ফোন করে ভাস্তে তন্ময় বলল, ‘আমরা আজ গভর্নরস আইল্যান্ডে যাব।’

ঠিক হলো, ও রওনা হয়ে যাবে সেখান থেকে সকালেই। পারসনস বুলেভার্ড থেকে এফ ট্রেনে করে ফরেস্ট হিল পর্যন্ত এসে ই ট্রেন ধরে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে নামব আমরা। নিউইয়র্ক পৌঁছে তন্ময়ও আরেকটি ট্রেনে করে আসবে এখানে। গ্রাউন্ড জিরো মেমোরিয়াল দেখে হাঁটতে থাকব জেটির দিকে। সেখানে যাওয়ার জন্যও সাবওয়ে বা ট্রেন আছে, কিন্তু ট্রেনে সেখানে যাব না। ও দিকটায় একটু হাঁটাহাটি করা হলে তা ম্যানহাটনের সঙ্গে আমাদের আরো একটু বেশি পরিচয় করিয়ে দেবে, তাই হাঁটার প্রস্তুতি নিয়েই আমরা পথ চলেছি। আমরা জানি, এ পথে হাঁটতে হাঁটতে আমরা একসময় পৌঁছে যাব ওয়াল স্ট্রিটে। গতবার শীতের সময় কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে মার্কিন দেশে আসার পর ওয়াল স্ট্রিটের কাছ থেকেই ফেরিতে করে আমরা লিবার্টি আইল্যান্ডে গিয়েছিলাম। উঠেছিলাম স্ট্যাচু অব লিবার্টিতে।

গভরনর্স আইল্যান্ডে ক্যাসেল উইলিয়ামস

গ্রাউন্ড জিরো নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে জঙ্গীদের হামলা এবং প্রায় ৩ হাজার মানুষের নিহত হওয়ার ঘটনা তো ভুলবার নয়। টুইন টাওয়ারের জায়গাটাতেই গড়ে উঠেছে মেমোরিয়াল। কালো পাথর দিয়ে ঘেরা দেয়াল, আর নিচে বিশাল গর্ত, যেখানে ক্রমাগত পড়ছে জলধারা। কালো দেয়ালটায় নিহত সবার নাম লেখা আছে।

এরপর ওয়াল স্ট্রিট। হাঁটতে হাঁটতে আমরা ওই উন্মত্ত ষাঁড়ের সামনে চলে এলাম। চার্জিং বুল, ওয়ালস্ট্রিট বুল বা বউলিং বুল নামে এটি পরিচিত। ষাঁড়টি পর্যটকদের বড় কৌতুহলের বিষয়। নানা দেশের নানা পর্যটক এখানে এক হয়েছে। ছবির পর ছবি তুলছে। ষাঁড়ের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে ‘ভয়হীন বালিকা (ফেয়ারলেস গার্ল)। একটু মনে করিয়ে দিই, ১৯৮৭ সালে বাজার বিপর্যয়ের ঝক্কি সামলাতে হয়েছিল মার্কিন দেশকে। ইতালীয় বংশোদ্ভূত শিল্পী আর্তুরো দি মদিকা এই ষাঁড়ের মূর্তি তৈরি করেন। এটি ছিল বাজার বিপর্যয়ের বিপরীতে মার্কিন জনগণের শক্তি ও সামর্থ্যের প্রতীক। জনপ্রিয়তার কারণে মূর্তিটিকে ওয়াল স্ট্রিটেই রেখে দেওয়া হয়।

‘ফিয়ারলেস গার্ল’ ভাস্কর্যটি এই ষাঁড়ের সামনে এনে রাখা হয় ২০১৭ সালের ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে। ষাঁড়কে যেন দ্বন্দ্ব যুদ্ধে আহ্বান করছে এই বালিকা। ভয়হীন বালিকার মূর্তিটি গড়েছেন শিল্পী ক্রিস্টেন ভিসবাল।পুরুষশাসিত সমাজে নারীদের প্রতিবাদও এর একটা মানে হতে পারে।

জিপিএস দেখে দেখে আমরা পৌঁছে গেলাম পোর্টে। চার মিনিট দেরি হওয়ায় আগের ফেরি ধরতে পারল না আমাদের ৭ জনের দলটি। ফলে জেটিতে কিছুক্ষণ বসে থাকতে হলো। গভর্নরস আইল্যান্ডে যাওয়ার সময়টা বেশি নয়। ১০ মিনিটের মধ্যেই ফেরি পৌঁছে যায় সেখানে। প্রতি আধ ঘণ্টায় ফেরি ছাড়ে। সুতরাং তাড়াহুড়া করার কিছু নেই। টিকিট কেটে জেটিতে বসা মানুষ আমরা সাতজনই। এরপর  ফেরির সময় কাছিয়ে আসতেই একটু একটু করে মানুষ আসতে লাগল। সামনে নদী। জেটিতে দাঁড়িয়ে ফেরির আগমনবার্তা শোনো গেল। কেউ টিকিট চেক করল না। কারণ, যারা এ পথ দিয়ে এসেছে, তারা চেকড হয়েই এসেছে।

দ্বীপটিতে নেমেই আমরা শুরুতে তার ইতিহাস জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি। সংক্ষেপে বলি, ১৬২৪ সালে প্রথম এখানে হল্যান্ড থেকে মানুষ এসে বসবাস শুরু করে। তখন এটাকে বলা হতো নুটেন আইল্যান্ড। ১৬৮৯ সাল থেকে এটি ছিল ব্রিটিশ রয়াল গভর্নরের আওতায়। এরপর ১৭৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত প্রথমে মার্কিন আর্মি ও পরে মার্কিন কোস্ট গার্ডদের অধীনে ছিল এই দ্বীপ।২০১০ সালে দ্বীপটি নিউইয়র্ক সিটির অধীনে এসেছে। পর্যটকদের জন্য এটি দেখার মতো একটি জায়গা।

দ্বীপটিতে নেমেই আমরা শুরুতে তার ইতিহাস জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি। সংক্ষেপে বলি, ১৬২৪ সালে প্রথম এখানে হল্যান্ড থেকে মানুষ এসে বসবাস শুরু করে। তখন এটাকে বলা হতো নুটেন আইল্যান্ড। ১৬৮৯ সাল থেকে এটি ছিল ব্রিটিশ রয়াল গভর্নরের আওতায়। এরপর ১৭৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত প্রথমে মার্কিন আর্মি ও পরে মার্কিন কোস্ট গার্ডদের অধীনে ছিল এই দ্বীপ।২০১০ সালে দ্বীপটি নিউইয়র্ক সিটির অধীনে এসেছে। পর্যটকদের জন্য এটি দেখার মতো একটি জায়গা।

ফেরি থেকে নেমে এ পথেই হেঁটে যেতে হয়

ফেরি থেকে নামার পর একটি বোর্ডে লেখা আছে এই দ্বীপের ইতিহাস। আমরা ইতিহাসের এতোটা গভীরে না গিয়ে বরং একটু ক্যাসেল উইলিয়ামসের কথা বলে নিই।

ক্যাসেল উইলিয়ামস ছিল সেনাবাহিনীর অধীনে। একসময় এটা জেলখানাও ছিল। ক্যাসেল উইলিয়ামসটা গড়া হয়েছিল চার বছর ধরে। নিউইয়র্কবাসীরা সবসময় বিদেশি আগ্রাসনের আতঙ্কে থাকত। ভাবত, জলপথে বাইরের শক্তি এসে দখল করে নেবে দেশটা। তাদের সে ভাবনাটা সত্যি হতে সময় লাগেনি। ১৭৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শখানেক ব্রিটিশ যুদ্ধ জাহাজ এসে ঘাঁটি গাড়ে নিউইয়র্কের উপকুলে।

ক্যাসেল উইলিয়ামস ছিল সেনাবাহিনীর অধীনে। একসময় এটা জেলখানাও ছিল। ক্যাসেল উইলিয়ামসটা গড়া হয়েছিল চার বছর ধরে। নিউইয়র্কবাসীরা সবসময় বিদেশি আগ্রাসনের আতঙ্কে থাকত। ভাবত, জলপথে বাইরের শক্তি এসে দখল করে নেবে দেশটা। তাদের সে ভাবনাটা সত্যি হতে সময় লাগেনি। ১৭৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শখানেক ব্রিটিশ যুদ্ধ জাহাজ এসে ঘাঁটি গাড়ে নিউইয়র্কের উপকুলে। মার্কিন আর্মির সঙ্গে যুদ্ধ করে তারা দখল করে নেয় ব্রুকলিন। সাত বছর ব্রুকলিন ছিল ব্রিটিশ বাহিনীর অধিনে।এই কঠিন স্মৃতিই মূলত একটা শক্ত নৌ শক্তি ও প্রতিরক্ষার ব্যাপারে মার্কিনীদের আগ্রহী করে তোলে। গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে যখন মার্কিনীদের দ্বন্দ্ব ক্রমশই বেড়ে উঠছিল, তখন মার্কিনীরা নিজ ভূখণ্ড রক্ষার জন্য সমুদ্রের তীর ধরে কিছু ফোর্ট তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। ১৮০৭ সালেই ক্যাসেল উইলিয়ামসের নির্মাণ কাজ শুরু হয়, শেষ হয় ১৮১১ সালে। এটি ছিল অস্ত্রসজ্জিত এক দারুণ ফোর্ট। বাইরের শত্রু যেন জলপথে এই দেশটায় হানা দিতে না পারে, তার পূর্ণ প্রস্তুতি ছিল এই সব ফোর্টে।

মার্কিন গৃহযুদ্ধে মারা গিয়েছিল মোট ৬ লাখ বিশ হাজার মানুষ। এদের মাত্র এক তৃতীয়াংশ মারা গিয়েছিল যুদ্ধের ময়দানে। বাকিরা মারা গিয়েছিল অসুখে ভুগে। ধুলো, মশা–মাছি, ইদুর, কাচা মাংস খাওয়া ইত্যাদি ছিল রোগের কারণ। রক্ত আমাশা, পেট ব্যথা, বমি, প্রচণ্ড জ্বর ইত্যাদিতে ভুগে মারা গিয়েছিল তারা।   

১৮১২ সালের যুদ্ধের পর ক্যাসেলে এত সেনা রাখার দরকার নেই বলে মনে করে কর্তৃপক্ষ। এরপর সৈন্যরা এখান থেকে চলে যায়। এটা একটা চেকপোস্ট হিসেবে টিকে থাকে। তবে গৃহযুদ্ধের সময় এটা আবার অন্যভাবে ব্যবহার করা শুরু হয়।

১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ পর্যন্ত মার্কিন দেশে যে গৃহযুদ্ধটা হয়েছিল, সেটি খুব দ্রুত শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে যারা মনে করেন, তারা ভুল করেন। সে সময় উত্তর ও দক্ষিণ—দুই প্রান্তেই অপরাধীর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। এই সমস্যা সমাধানের জন্য অন্যান্য ফোর্টের মতো ক্যাসেল উইলিয়ামসও পরিণত হয় অস্থায়ী জেলখানায়। তবে তাতে খুব কড়াকড়ি ছিল না।

সময়টা আনন্দে কাটানো যায়

মার্কিন গৃহযুদ্ধে মারা গিয়েছিল মোট ৬ লাখ বিশ হাজার মানুষ। এদের মাত্র এক তৃতীয়াংশ মারা গিয়েছিল যুদ্ধের ময়দানে। বাকিরা মারা গিয়েছিল অসুখে ভুগে। ধুলো, মশা–মাছি, ইদুর, কাচা মাংস খাওয়া ইত্যাদি ছিল রোগের কারণ। রক্ত আমাশা, পেট ব্যথা, বমি, প্রচণ্ড জ্বর ইত্যাদিতে ভুগে মারা গিয়েছিল তারা।   

আগেই বলেছি, জেলখানায় খুব কড়াকড়ি ছিল না। সময় সময় কয়েদিরা পালিয়ে যেত। সে খবর উঠত পরদিনের পত্রিকায়। সে রকম কয়েকটি খবর দেখলাম আমরা। ১৯০১ সালের ২৯ আগস্ট নিউইয়র্ক টাইমসে বেরিয়েছিল খবর: মার্কিন আর্মির সেকেন্ড ক্যাভেলরির সাবেক প্রাইভেট জর্জ হার্ভি গভর্নরস আইল্যান্ডে কয়েদ খাঁটছিলেন। গতকাল তিনি এখান থেকে সাঁতার কেটে পালিয়ে যান। বাটারমিল্ক চ্যানেলের অর্ধেক পাড়ি দেওয়ার পর কোনো এক জলযানে চড়ে বসেন। ১৮৯৮ সালের ২৪ অক্টোবর নিউইয়র্ক টাইমসের খবর: গতকাল আবার আরেকজন কয়েদি গভর্নর দ্বীপ থেকে পালিয়েছেন। তাঁর নাম টমাস এ. ম্যাকগার্ক। তিনি ছিলেন থার্ড নিউজার্সি ভলেন্টিয়ার। শুক্রবার সকালে তিনি অসুস্থ বোধ করছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। তাকেসহ অন্য ১০জন কয়েদীকে নিয়ে একজন গার্ড হাসপাতালে গিয়েছিল। নম্বর গুনতে ভুল করায় ম্যাকগার্ক সেখান থেকে সরে পড়েন। রাত ৮.৩০–এর একটি জলযান ধরে তিনি মূল শহরে চলে যান।

এ রকম আরো কয়েকটি কয়েদী পালানোর খবর রাখা আছে সেখানে।

ক্যাসেল উইলিয়ামটা কয়েকবার সংস্কার করা হলেও রেখে দেওয়া হয়েছে আগের আদলেই। শুরুতে আমার কাছে ক্যাসেলটাকে অশ্বক্ষুরাকৃতি বলে মনে হয়েছিল। ভিতরে ঢুকে মনে হলো মাঝখানে ফাঁকা রেখে গোলও হতে পারে এটা। মার্কিনীরা সবখানেই ব্যবসা বোঝে, তাই এই জেলখানার ভিতরেও রয়েছে দোকান। কিন্তু বোঝার উপায় নেই যে সেটা দোকান। পুরনো আমলের কোস্ট গার্ডের পোশাক পরে এক পুরুষ ও এক মহিলা সেখানে বিক্রি–বাট্টা করছেন। তবে এখানকার পণ্যগুলো সুভেনির ধরনের।

এক একটা ঘরে যাই, আর মিউজিয়ামের মতো তা দেখতে থাকি। ঘরগুলোয় লেখা আছে নানা ইতিহাস।  

গভর্নরস আইল্যান্ডে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটেছে। তারই দুটো এখানে বলে রাখলে খারাপ লাগবে না।

অরভিল ও উইলবার রাইট নামে দুই ভাই আবিস্কার করেছিলেন উড়োজাহাজ। এ কথা নতুন করে বলা হলো এই জন্য যে ১৯০৯ সালে এই গভর্নরস আইল্যান্ড থেকেই উইলবার রাইট প্রথম পানির ওপর দিয়ে বিমান চালনা করেছিলেন। লোয়ার ম্যানহাটনে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল সে উড্ডয়ন দেখার জন্য।

আরেকটি ঘটনা বিংশশতাব্দির। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান ও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভের মধ্যে শেষ বৈঠকটি হয়েছিল এই গভর্নরস আইল্যান্ডে। মনে করা হয়, এই সময়টিতে মার্কনী ও সোভিয়েতদের মধ্যে চলতে থাকা ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসান হয়ে যায়। এ সময়েই তারা পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের জন্য সফল চুক্তি করেন।

ক্যাসের উইলিয়াম সত্যিই দেখার মতো। পুরনো আমলের কঠোর সামরিক জীবন কিংবা বন্দিজীবন কেমন হতে পারে, তা বোঝা যায় এখানে এলে।

কিন্তু গভর্নরস আইল্যান্ডের মানে তো কেবল ক্যাসেল উইলিয়ামস নয়। চোখে রং লাগানো, মনে রং লাগানো আরো অনেককিছুই আছে এখানে। অনেকেই দেখলাম, সাইকেল ভাড়া করে চষে বেড়াচ্ছে দ্বীপটি। কেউ আবার ভাড়া করেছেন বিশাল সাইকেল। ৬ জন বসা যায় তাতে। সেটার প্রতি আমাদের লোভ ছিল। কিন্তু আমাদের সাতজনের দলের একজন বাদ পড়ে যাবে বলে এ যাত্রা আর সাইকেলে উঠলাম না আমরা। কিছূদূর হাঁটার পর দেখা গেল হেলিকপ্টারের সমান একটি মোটর সাইকেল বানানো হচ্ছে।

দ্বীপটিতে আরো অনেককিছু দেখার আছে। ভাগ করা সে জায়গাগুলোর নাম বলি। রয়েছে লিগেট হল, কর্নেলস রো, লিগেট টেরাস, হ্যামোক গ্রোভ, নোলান পার্ক ইত্যাদি।

একটা ফোয়ারার সামনে পাতা চেয়ারে বসলাম আমরা। তন্ময় আর শৌনক গেল কিছু চিপস আর পানীয় কিনে আনতে। আকাশে কিছুটা মেঘ, কিন্তু সুন্দর লাগছে চারদিক। অনেকেই এসেছেন এখানে বেড়াতে। কিন্তু ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় পর্যটকদের ভিড় বোঝা যাচ্ছে না। একটা পরেই দলের শুক্তি, সনকা, তন্ময় আর শৌনকের মনে হলো ঝরনার জলে পা ভেজাবে। এটা বেআইনি নয়। ওরা নেমে গেল সেই স্বচ্ছ জলে। ফোয়ারার পানি উঠছিল নিচের দিক থেকে। পা দিয়ে কিছুক্ষণ আটকে রাখলে সে পানির ফোয়ারা থেমে যায়, তারপর ছেড়ে দিয়েল তা আরো বড় হয়ে আসে। এই খেলাটাই চলল কিছুক্ষণ। ওদের দেখাদেখি আরো কেউ কেউ নেমে পড়ে ঝরনার জলে। শিশু থেকে শুরু করে বড়রাও শরিক হয় এই খেলায়।

হ্যামক গ্রোভের কথা শুনেছিলাম আগেই। এখানে দড়ি দিয়ে বানানো বেশ কিছু দোলনা রয়েছে। ইচ্ছে ছিল, একদিকের পাহাড়ের দিকে যাব। পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে থাকা পর্যটকদের দেখতে পাচ্ছি এখান থেকেই। তাদের আকার ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ে উঠতে হলে অনেকটা সময় লাগবে। তাই পাহাড়ের দিকে না গিয়ে তাই আমরা হ্যামক গ্রোভের দিকে এগোই। সেখানে প্রথমেই দেখলাম এক অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য। এক বাবার কোলে মথা রেখে ঘুমিয়ে আছে এক শিশু। বাবাও ঘুম। তারা দুলছে দোলনায়।

আমাদের দলটিও চঞ্চল হয়ে উঠল।  দোলনাতে ওঠার একটা কৌশল আছে। সেটা না জানলে বারবার পড়ে যেতে হয়। সেই কৌশল শিখে নিয়ে সবাই যে যার দোলনায় উঠে পড়ল। একজন থাকল ধাক্কা দিয়ে দোলনা সচল রাখার দায়িত্বে।

দোলনা থেকে আকাশের দিকে চেয়ে দেখি, মেঘ সরে গিয়ে নীল আকাশ বেরিয়ে এসেছে।

এ এক পরামনন্দের সঙ্গে পরিচয়।

দলের শুক্তি বলল, ‘এখানে সারাদিন দুলতে থাকা যায়।’

কথাটা মিথ্যে নয়। ক্লান্ত শরীরে ঘুরতে ঘুরতে যখন একটি দোলনায় শুয়ে আকাশ দেখা যায়, তখন এ কথাই মনে হয়, আর কিছু নয়।    

আরও লেখা

krac
মুক্তিযুদ্ধ

হাফিজের চোখ

জাহীদ রেজা নূর হাফিজের কথা ভাবলে প্রথমেই মাথায় পুর্ণতা পায় একটা ছবি—একজন মানুষ চোখ বন্ধ

শিশু ও কিশোর সাহিত্য

নীল দাড়ি

শার্ল পেরোঅনুবাদ: জাহীদ রেজা নূর এক দেশে ছিল খুব বড়লোক একজন। তার ছিল সুন্দর এক

জাহিদ রেজা নূর । স্বপ্নের সারথি
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Scroll to Top