পড়াশোনা না করলে...! | জাহীদ রেজা নূর

লেখাটি শেয়ার করুন

Share on facebook
Share on linkedin
Share on twitter
Share on email

হ্যারি পটার ই–মেইলের উত্তর দেয়নি বলে পাগলা দাশু খুবই মেজাজ খারাপ করে বসে ছিল ওর পড়ার টেবিলের সামনে। ওর চুলগুলো সব সজারুর কাটার মতো খাড়া হয়ে রয়েছে। রাগ করলে এ রকমই হয়। মামুলি একটা সমস্যায় আটকে গেছে ও। হগওয়ার্ড থেকে একটা জাদুর কাঠি পাঠানো যায় কিনা, সে ব্যাপারে হ্যারিকে ই–মেইল করেছিল দাশু। ফেসবুক মেসেঞ্জারেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু হ্যারি লাপাত্তা।

এ সময় কলবেল বেজে উঠল। এসেছে হ্যাকেলবারি ফিন। ঘরে ঢুকেই স্যান্ডেল দুটো ঘরের দুদিকে ছুড়ে ফেলে সটান খাটে শুয়ে পড়ল সে। বোঝা গেল, কাজ হয়নি, তাও প্রশ্ন করতে হয় বলে প্রশ্ন করল দাশু, ‘কাজ হলো?’

‘না! আলাদিন বাড়িতে নেই। আলাদিনটাও একটু কেমন যেন হয়ে গেছে। প্রদীপটা হাতছাড়া করতে চায় না! যেখানে যায়, প্রদীপ নিয়ে যায়। কাউকে দিতে চায় না। ওকে মোবাইলেও পাওয়া যাচ্ছে না।’

‘ও!’ হতাশ হয়ে কাঠের চেয়ারটায় শরীর এলিয়ে দিল পাগলা দাশু।

‘তুই হ্যারিকে পেলি?’ এবার ফিন জানতে চাইল।

‘না। উত্তর দিচ্ছে না ব্যাটা! ব্রিটিশদের নিয়ে এই এক সমস্যা। নিজের স্বার্থ না থাকলে কখনোই এগিয়ে আসে না!’ দাশু বিরক্তি নিয়ে বলল।

হো হো করে হেসে উঠল ফিন। ‘আমরা বুঝি খুব নিস্বার্থ? তুই, বাঙালি দাশু? কিংবা আমি, আমেরিকান ফিন?’

এরপর বেশ খানিকক্ষণ কথা চালাচালির পর ওরা একমত হলো যে, আসলে নিজের আগ্রহ না থাকলে কেউই কারো পাশে দাঁড়ায় না। তারপর দুজনই নিজেদের ওপর একটু বিরক্ত হলো। আলাদিন বা হ্যারি হয়তো অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত আছে।

দাশু এবার ওর অংক বইটা বের করে অংক কষতে লাগল। অংক করলে যদি একটু মাথা খোলে!

ফিন চোখ বন্ধ করে মড়ার মতো পড়ে রইল বিছানায়। পড়াশোনা কখনোই ভালো লাগেনি ফিনের। এখনও লাগে না।

২.

সমস্যাটা বড় কিছু নয়। কিন্তু দাশু আর ফিনের জন্য অপমানকর। ওরা ঠিক করেছিল পড়াশোনা করবে না আর। ‘আমরা আর বাড়ি ফিরব না। নাবিক হয়ে গুপ্তধন খুঁজতে বেরিয়ে যাচ্ছি। পথে যেতে যেতে জিম হকিন্সের ফোন নম্বর খুঁজে নেব। ওই রত্নদ্বীপে এখনও অনেক পুরনো কয়েন পড়ে আছে। আমরা বড়লোক হয়ে যাব। হাহ হাহ হা! ’ এরপর দুজন পিন দিয়ে বুড়ো আঙুল ফুটো করে দু ফোটা রক্তও ছড়িয়ে দিল চিঠিতে। এটাই ওদের স্বাক্ষর।

এ রকম একটি হাতে লেখা চিঠি যখন পেলেন দাশুর মামা, তখনই তিনি মন্ত্রী–মিনিস্টার ধরে ওদের খোঁজ লাগালেন। বাংলাদেশে এসে হ্যাকলবারি ফিন দাশুদের বাড়িতেই ছিল। ফলে দুজন একসঙ্গে হাওয়া হয়ে যাওয়ায় পুলিশের পক্ষে সহজ হলো ওদের খুঁজে বের করা। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পাওয়া গেল ওদের। পুলিশ দুজনকে ফিরিয়ে আনার পর মামা জিজ্ঞেস করলেন, ‘বললি নাবিক হবি। তা সৈকতে কী করে বেড়াচ্ছিলি?’

দাশু বলল, ‘কতদিনের জন্য সমুদ্রে যাচ্ছি! তার আগে একটু সমুদ্রস্নান করছিলাম আর কি!’

ফিন বলল, ‘ইয়েস, মামা। প্রশান্ত মহাসাগর আর আটলান্টিক মহাসাগর দেখেছি আমি। কিন্তু বঙ্গোপসাগর তুলনাহীন। আমি তো দাশুকে বলেছিলাম, এখানেই থেকে যাই। বাদাম বিক্রি করে জীবন কাটিয়ে দিই!’

‘চোপ!’ চিৎকার করে উঠেছিলেন দাশুর মামা। তারপর আর দেরি না করে ‘গুরুগৃহ’ নামে একটি জেলখানার মতো স্কুলে ওদের দুজনকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। এখানেই হোস্টেলে থাকতে হবে। পড়াশোনাও এখানে। সপ্তাহে ছয়দিন এখানে পড়াশোনা, একদিন বাড়ি যাওয়ার অনুমতি আছে।  ভর্তি হওয়ার পর পরই গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হয়েছে, তাই ওরা আবার বাড়িতে। তবে, বাড়িতে আসার আগের দিন, স্কুলের শেষদিনে একটা ঘটনা ঘটেছে, সেটা নিয়েই ওরা দুজন খুব বিরক্ত। সে ঘটনার জন্যই ওরা হ্যারি পটার আর আলাদিনের খোঁজ করছিল। আরো সহজ করে বলতে গেলে বলতে হয়, ওদের দরকার হগওয়ার্ডের যাদুর কাঠি বা আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ।

স্কুলটা সব ছেলেদের শাসনে রাখে আর ভয় দেখায়। হেডস্যার আবদুল কুদ্দুস। কুদ্দুস স্যারের ভয়ে নাকি অনেকেই প্যান্টে ইয়ে টিয়ে করে দেয়। সেই কুদ্দুস স্যার সবসময় একটা বেত হাতে নিয়ে ক্লাসে ক্লাসে ঘুরে বেড়ান আর বলেন, ‘পড়াশোনা না করলে…’। কথা শেষ না করে তিনি সরষের তেলে মাখানো হাতের বেতটা শুধু নাড়াতে থাকেন। এর মানে হচ্ছে, লাঠির বাড়ি একটাও মাটিতে পড়বে না…।

দাশু আর ফিন লক্ষ করে দেখেছে, এই বেত হাতে থাকলেই কুদ্দুস স্যার ভয়ঙ্কর। আর বেত ছাড়া তিনি একেবারে অমায়িক, বিনয়ী মানুষ।     

৩.

‘অ্যাঁই, তোরা! বইয়ের দুই নায়ক! এদিকে আয়!’ কুদ্দুস স্যার এভাবেই ওদের ডাকলেন।

সুকুমার রায় আর মার্ক টুয়েনের বইয়ে আছে বলে এভাবে ওদের ডাকতে হবে? খুব মেজাজ খারাপ হলো দাশু আর ফিনের।

‘লেখক দুটো তো অক্কা তুলেছে! ওরা তোদের এখানে রেখে গেল কেন? অকারণে এখন আমার স্কুলটায় ঝামেলা পাকাবি!’ লাঠি নাড়াতে নাড়াতে বললেন কুদ্দুস স্যার।

দাশু বলল, ‘আপনি কী করে বুঝলেন, আমরা ঝামেলা পাকাব?’

‘সেটা কে না বোঝে? বইজুড়ে তো শুধু দাপিয়ে বেড়িয়েছিস দুজনে! একটা ভালো কাজও কি করেছিস?’

‘কেন, ছাদে যারা আমসত্ব শুকাতে দেয়, তাদের উপকার করেছে না দাশু?’ বন্ধুর পক্ষে সাফাই গাইল ফিন।

‘কী উপকার?’

‘বাহ! আপনি যেন পাগলা দাশু পড়েননি? পাড়ার মা–দাদিরা যখন আমসত্ত্ব বানিয়ে ছাদে শুকাতে দিত, তখন তারা দাশুকে ডাকত। দাশু কয়েকবার ছাদে চক্কর দিলেই ছাদ থেকে লোভী কাকেরা পালাত। আর আসত না। তাই সবার আমসত্ত্ব ঠিক থাকত। কাক খেয়ে যেত না।’

‘অ্যাই, ফিন! তৃই চুপ থাক! তুই তো তোর একটাও ভালো কাজ দেখাতে পারবি না! তোদের দুজনকে কী করে মানুষ করব, সেটা ঠিক করব লম্বা ছুটিটার পর। পড়াশোনা না করলে…।’ কুদ্দুস স্যার বেত নাড়াতে নাড়াতে হুমকি দিয়ে রাখলেন।

দাশু আর ফিনের মেজাজ খারাপ হওয়ার জন্য এই বেত নাড়ানোই যথেষ্ট।

বাদাম কিনে চিবুতে চিবুতে সেদিন ফেরার পথে ফিন বলেছিল, ‘শোন! আমাদের এমন কিছু একটা করতে হবে, যেন কুদ্দুস স্যারের হাতে বেত না থাকে। তাহলেই তিনি শাসাবেন না, আদর করে কথা বলবেন।’

 দাশু এদিক–ওদিক মাথা নেড়ে বলেছিল, ‘নাহ! এটা তো সহজ কাজ। বেতটা চুরি করে নিলেই তো আর বেত থাকবে না হাতে। একটু বড় ধরনের শাস্তি দিতে হবে স্যারকে!’

‘কী?’ চোখ বড় বড় করে জানতে চাইল ফিন।

‘সেটাই তো ভাবছি। দাঁড়া, একটু ভেবে নিই, তারপর বলব।’

৪.

‘কীরে দাশু, আমাকে খুঁজিস কেন?’ ছুটি শেষ হওয়ার দুদিন আগে হ্যারি পটারের মেইল এল।

‘হডওয়ার্ডের একটা জাদুর কাঠি ধার দিবি কদিনের জন্য?’

‘ওটা তো আমার কাছে নেই। জোগাড় করার চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু পাঠাব কী করে? তোর দেশের বৈমানিকরা তো ধর্মঘট করেছে। ওরা চাইছে ফ্লাইটের আগে ছোট ছোট প্লেন দিয়ে যেন বাড়ি থেকে ওদের বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়। কর্তৃপক্ষ তা মানছে না। তারা বলছে, গাড়িতেই আসতে হবে পাইলটদের। জরুরি রকেট সার্ভিসও বন্ধ।’

‘তুই খুঁজে রাখ। আমি আলাদিনের জিনকে পাঠানোর চেষ্টা করছি। আলাদিনকে পেলেই তোকে জানাচ্ছি।’

হ্যাঁ, রকেট আর প্লেনের পাইলটদের ধর্মঘটের কথা জানত দাশু। এ জন্যই ফিনকে পাঠিয়েছিল আলাদিনের কাছে। আলাদিন এখন মিশরে থাকে। কদিনের জন্য বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছে সিন্দাবাদকে সাথে নিয়ে। সিন্দাবাদ নাকি বাংলাদেশের সঙ্গে কী এক বাণিজ্য করতে চায়। উঠেছে একটা পাঁচতারা হোটেলে। কিন্তু আলাদিন আর সিন্দাবাদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

কিন্তু ভাগ্য ভালো হলে সমস্যার সমাধানও হয়ে যায়। ফিন জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে রাস্তার ওপারের মুদির দোকানে আলাদিন কলা কিনছে। সিন্দাবাদ দোকানের বেঞ্চিতে বসে পান খাচ্ছে। কাকতালীয় ব্যাপার!

‘দাশু! ওই তো আলাদিন!’

ফিনের ডাকে তড়াক করে উঠে বসল দাশু। তারপর জানালা দিয়ে তাকাল। না, ফিন রসিকতা করেনি। ওই তো আলাদিন!

৫.

দোকান থেকে আলাদিন আর সিন্দাবাদকে বাড়ি নিয়ে এল দাশু। রাস্তার ধারের দোকানের ডালপুরি আর শিঙাড়া ছিল টেবিলে, সেগুলো খাইয়ে দিল আলাদিন আর সিন্দাবাদকে। তারপর চারজন চার কাপ চা নিয়ে বসল।

দাশু বলল, ‘আলাদিন, তোমার জাদুর প্রদীপটা আমাকে একটু দেবে?’

চায়ে একটা লম্বা চুমুক দিয়ে আলাদিন বলল, ‘কেন?’

‘জিনকে একটু হগওয়ার্ডে পাঠাব।’

‘কেন?’

‘হ্যারি পটারের কাছ থেকে একটা জাদুর কাঠি নিয়ে আসবে?’

‘কেন?’

এবার মেজাজ খারাপ হলো দাশুর। ‘তুমি শুধু কেন কেন করছ কেন?’

ফিক করে হেসে দিল আলাদিন। ‘ওই তো তুমিও তো কেন বললে!’

এবার দাশুর মুখেও হাসি। বলল, ‘আমাদের হেডস্যারকে একটু টাইট করতে হবে।’

‘কেন?’ পঞ্চমবারের মতো ‘কেন’ বলল আলাদিন।

ফিন এতক্ষণ সিন্দাবাদের সঙ্গে কথা বলছিল। খেয়েদেয়ে সিন্দাবাদের একটু ঘুমিয়ে নিতে ইচ্ছে করছে, তাই সে তার শরীর এলিয়ে দিল বিছানায়। আর শোয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নাক ডাকাতে শুরু করল। ফলে ফিনও এসে যোগ দিলো ওদের দুজনের কথার মধ্যে। যোগ দিল মানে, হেডস্যারের ভয়ঙ্কর সব কথাগুলোর কথা বলল আলাদিনকে এবং বলল, ছুটি শেষ হলেই একটা এসপার ওসপার করতে হবে।

‘তোমরা কী করতে চাও?’

‘আপাতত জিনকে হডওয়ার্ডে পাঠাব। জাদুর কাঠিটা দিয়ে আমরা কুদ্দুস স্যারের সঙ্গে একটা কাজ করব।’

‘কী?’ এবার খুব উৎসাহ দেখাল আলাদিন।

আলাদিনের কানে কানে সে কথা বলল দাশু। তাতে আলাদিনের চোখ চকচক করে উঠল। তারপর ঝোলার ভিতর থেকে বের করে আনল প্রদীপটা। ঘষা দিতেই বের হয়ে এল জিন। বলল, ‘হুকুম করুন।’

‘তুমি হডওয়ার্ডে যাও। গিয়ে হ্যারি পটারের কাছ থেকে ওর জাদুর কাঠিটা নিয়ে এসো।’

‘জো হুকুম!’

আর কোনো কথা না বলে জানালা দিয়ে উড়ে বেরিয়ে গেল জিন। দাশু হ্যারিকে মেইল করে দিল—‘কাঠি জোগাড় করে রাখো। জিন আসছে নিতে।’

৬.

এরপরে যা ঘটল, তা সত্যিই এ ভয়ঙ্কর ঘটনা।

স্কুল খুলেছে। বাক্স–পেটরা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে পাগলা দাশু আর হ্যাকেলবারি ফিনও চলে এসেছে স্কুলে। হোস্টেলে জিনিসপত্র রেখে ক্লাসে এল দাশু আর ফিন। ক্লাস শুরু হয়েছে। একটু পর কুদ্দুস স্যার এলেন হাতে বেত নিয়ে। বাঘের মতো বড় বড় চোখ করে বেত নাড়তে নাড়তে তিনি বললেন, ‘বহুদিন সুখ করেছ। এবার আমি পেয়েছি তোমাদের। পড়াশোনা না করলে…।’

দাশু আর ফিন চোখাচোখি করল। তারপর দাশুর ব্যাগ থেকে বের হলো ছোট্ট একটা জাদুর কাঠি। হডওয়ার্ড থেকে জিন নিয়ে এসেছে। দাশু সেই কাঠিটা মুখের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘বেতটা স্যারের হাতের সঙ্গে আজ সারাদিন লেগে থাকবে…।’

ব্যাস! কেউ কিছু বুঝল না। স্যারও ‘পড়াশোনা না করলে’ বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন।

বেরিয়ে আর কোথায় যাবেন, গেলেন টিচার্স রুমে। অন্যদিন ঘরে বেতটা রেখে যান, আজ সে কথা মনে রইল না তার।

সামাদ স্যার অংকের মাস্টার। বুলবুল স্যার পড়ান পদার্থ বিজ্ঞান। সতীশ স্যারের বিষয় হলো ইংরেজি। কুদ্দুস স্যার টিচার্স রুমে এসে এই তিনজনকেই পেলেন সামনে। কুদ্দুস স্যারকে দেখে তিন স্যারই তাঁর সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন। অন্য দিন হলে কুদ্দুস স্যার বিনয়ী হাসি হেসে জিজ্ঞেস করতেন, ‘কেমন আছেন?’

আজ তিনি বেতটা নাড়তে নাড়তে বললেন, ‘এখানে বসে আছেন কেন, ক্লাসে যাচ্ছেন না কেন?’

’ঘাবড়ে গিয়ে বুলবুল স্যার বললেন, ‘আমাদের তো সেকেন্ড পিরিওড।’

খেপে উঠলেন কুদ্দুস স্যার, ‘নিকুচি করি আপনার সেকেন্ড পিরিওড। এখনি ক্লাসে যান। পড়াতে না পারলে…!’

বুলবুল স্যার অবাক হয়ে কুদ্দুস স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। সামাদ স্যার আর সতীশ স্যার কোনো কথা না বলে দ্রুত বের হয়ে গেলেন ঘর থেকে।

নিজের ঘরে গিয়ে কুদ্দুস স্যার বেতটা রাখতে চাইলেন টেবিলে। কিন্তু রাখতে পারলেন না। বেতটা তার হাতের সঙ্গে নড়তে চড়তে থাকল। একটু অবাক হলেন কুদ্দুস স্যার। কিন্তু তার মুখ দিয়ে এমনি বেরিয়ে গেল,‘এই বেত, নাম। নেমে যা হাত থেকে। হাত থেকে না নামলে…!’

বেত তো আর নামে না। তাই একটু শঙ্কিত হয়ে কিছুক্ষণের জন্য নিজের বাড়িতে গেলেন কুদ্দুস স্যার। তরজা খুলে দিলেন স্যারের স্ত্রী। অন্যসময় একগাল হেসে কুদ্দুস স্যার বলেন, ‘এই তো আমি চলে এসেছি। এক কাপ চা খাওয়াতে পার?’

আজ কিন্তু ঘরে ঢুকেই স্যান্ডেল জোড়া দুইদিকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বেত নাড়তে নাড়তে বললেন, ‘তুমি করছোটা কি? এখনই চা না দিলে…!’

স্যারের স্ত্রী তো ভীষণ ক্ষেপে গেলেন। তক্ষুণি স্যারকে নামিয়ে দিলেন রাস্তায়, বললেন, ‘আর ঘরমুখো হোয়ো না!’

স্যার তো বুঝলেন বড় বিপদ! কিন্তু কেন এমন হচ্ছে, বুঝতে পারলেন না। পরে কাঁদো কাঁদো মুখে তিনি নিজেকেই নিজে বললেন, ‘বেত ব্যাটা হাত থেকে নেমে গেলে আমি আর কখনো বেত নেব না হাতে। বাচ্চাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করব।’

এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে হাত থেকে খসে পড়ল বেত (তোমরা তো বুঝতেই পারছ, মানুষ ভালো হয়ে গেলে হ্যারির জাদুর কাঠি তাকে আর বিপদে ফেলে না)। স্যার খুব খুশি হয়ে বেতটা ফেলে দিলেন ডাস্টবিনে। তারপর ফিরে এলেন স্কুলে। দাশুদের ক্লাসে ঢুকে বললেন, ‘আজ খুব ভালো আবহাওয়া। চলো আমরা সবাই পার্কে গিয়ে ক্লাস করি!’

দাশু আর ফিন একে অন্যের দিকে তাকিয়ে একচোট হেসে নিল। তারপর ব্যাগ থেকে আশ্চর্য প্রদীপ বের করে ফিন ডাকল জিনকে। জিনের হাতে জাদুর কাঠি দিয়ে বলল, ‘যাও হগওয়ার্ড। হ্যারিকে দিয়ে এসো। আর প্রদীপটাও নিয়ে যাও। আলাদিনের হাতে প্রদীপ দিয়ে তুমি তাতে ঢুকে পোড়ো!’

জিন একটা স্যালুট দিয়ে উড়ে চলে গেল।

আমরা অবশ্য জানি না, স্যার কী করে তাঁর স্ত্রী আর ওই তিন স্যারকে পরে সামলেছিলেন। তবে আমরা জানি, এরপর থেকে তিনি আর কোনোদিন বেত হাতে নেননি।

আরও লেখা

krac
মুক্তিযুদ্ধ

হাফিজের চোখ

জাহীদ রেজা নূর হাফিজের কথা ভাবলে প্রথমেই মাথায় পুর্ণতা পায় একটা ছবি—একজন মানুষ চোখ বন্ধ

শিশু ও কিশোর সাহিত্য

নীল দাড়ি

শার্ল পেরোঅনুবাদ: জাহীদ রেজা নূর এক দেশে ছিল খুব বড়লোক একজন। তার ছিল সুন্দর এক

জাহিদ রেজা নূর । স্বপ্নের সারথি
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Scroll to Top