ভ্লাদিমির মায়াকোভ্স্কির মেয়ের সাক্ষাৎকার
মায়াকোভ্স্কি যুক্তরাষ্ট্রে যান ১৯২৫ সালে। বিবাহিতা, রুশ বংশোদ্ভূত মার্কিন অভিবাসী এলিজাবেতা জিবের্ত তখন মার্কিন মুল্লুকে মায়াকোভ্স্কির দোভাষী হিসেবে কাজ করেন। পরের বছর এই এলিজাবেত একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। চেহারায় শিশুটি অবিকল মায়াকোভ্স্কি। নাম রাখা হয় ইয়েলেনা পাত্রিসিয়া। ভ্লাদিমির মায়াকোভ্স্কি তাঁর কন্যাকে দেখেছেন একবারই, ১৯২৮ সালের শরতে। কিছুকাল পরেই কবি আত্মহত্যা করেন। বর্তমানে ইয়েলেনা পাত্রিসিয়া—বিয়ের পর তাঁর নাম ইয়েলেনা ভ্লাদিমিরোভনা টমসন—কলেজে শিক্ষকতা করছেন। সম্প্রতি রুশ পত্রিকা আগুর্মেন্তি ই ফাক্তি র সাংবাদিক গেওর্গি জাতোফ তাঁর একটি সাক্ষাৎকার নেন। ইয়েলেনা তাঁর মা ও মায়াকোভ্স্কি, রাশিয়া ও স্তালিনকে নিয়ে কথা বলেছেন। রুশ থেকে অনুবাদ করেছেন জাহীদ রেজা নূর
গেওর্গি জাতোফ: ইয়েলেনা ভ্লাদিমিরভনা, বাবার সঙ্গে আপনার সাক্ষাতের কথা কি মনে পড়ে?
ইয়েলেনা ভ্লাদিমিরভনা টমসন: খুব অল্পকিছুই আমার মনে আছে। তখন আমি খুব ছোট ছিলাম। সেন্ট পিটার্সবুর্গের জাদুঘরে একবার মায়াকোভ্স্কির হাতের লেখা পাণ্ডুলিপি দেখলাম, তারই এক পাতায় দেখলাম একটি ফুল আঁকা। দেখে আমার কান্না পেল। মনে পড়ল, শৈশবে এ ধরনের ফুলই আমি আঁকতাম। অকস্মাৎ আমার মনে পড়ে গেল সেই দিনের ঘটনাটি: কীভাবে আমি খেলছিলাম, পেনসিল দিয়ে কীভাবে আমি বাবার লেখার খাতায় আঁকিবুঁকি করছিলাম। আঁকার সময় একটি পাতা ছিঁড়ে গেল, তারপর উড়ে গেল বাতাসে। ভীষণ খেপে গিয়ে মা আমাকে বকুনি দিলেন। বাবা কিন্তু আমারই পক্ষ নিলেন। মাকে বললেন, ‘তুমি কখনোই বাচ্চার গায়ে হাত তুলবে না।’ বাবা আমাকে তখন খেলনা উপহার দিলেন, সেটা ছিল একটা ধূসর রঙের হাতি।
নিউইয়র্কে এসে আমি সেই হাতিটি হারিয়ে ফেলেছিলাম।
জাতোফ: একবারই বাবার সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছিল। শুধু একবার কেন?
ইয়েলেনা: বাবা আরও একবার দেখা করতে বলেছিলেন। কিন্তু মা বললেন, না। মাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তাঁর ভিসা আবার বাতিল করে দেওয়া হয় কি না, সে ভয় পাচ্ছিলেন মা। তাই মা মায়াকোভ্স্কিকে সরাসরি বললেন, ‘আমাকে ক্ষমা কোরো ভালোদিয়া, কিন্তু তুমি তো বোঝো যে আমার বাচ্চাটিকে বাঁচাতে হলে প্রতিদিন তার খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’
বাবা আরও একবার দেখা করতে বলেছিলেন। কিন্তু মা বললেন, না। মাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তাঁর ভিসা আবার বাতিল করে দেওয়া হয় কি না, সে ভয় পাচ্ছিলেন মা। তাই মা মায়াকোভ্স্কিকে সরাসরি বললেন, ‘আমাকে ক্ষমা কোরো ভালোদিয়া, কিন্তু তুমি তো বোঝো যে আমার বাচ্চাটিকে বাঁচাতে হলে প্রতিদিন তার খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
জাতোফ: মায়াকোভ্স্কি আপনার মাকে কোনোভাবে কোনো সাহায্য করেননি?
ইয়েলেনা: না। তবে তিনি মাঝেমধ্যে টেলিগ্রাম পাঠাতেন।
জাতোফ: তাতে কি তাঁর চরিত্রের ভালো দিকটি আর উন্মোচিত হলো?
ইয়েলেনা: কবিরা গরিব হয়, তার ওপর তাঁরা তো একেবারেই বাস্তববুদ্ধিবিবর্জিত, আকাশে চড়ে বেড়ায়। মায়াকোভ্স্কি যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে টাকা পাঠাতেনও, আমরা তা পেতাম বলে মনে হয় না। আপনার তো সে সময়ের নিউইয়র্ক সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। নিউইয়র্কে তখন এক পয়সার জন্যও খুন হতো। পোস্টঅফিস থেকে মনিঅর্ডারের টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরা যেত না। তবে কথা সেটা না। মা বহু আগে আমাকে বলেছিলেন, ‘ভালোদিয়াকে কোনো কারণেই দোষ দিবি না।’
জাতোফ: আপনার মা কীভাবে মায়াকোভ্স্কির চরিত্র এঁকেছিলেন? বলা হয়, কবি মাঝেমধ্যেই যেকোনো কারণে বিষণ্নতায় ভুগতেন?
ইয়েলেনা: মা বলেছিলেন, ভালোদিয়া ছিলেন শক্তিমান, ফুরফুরে মেজাজের মানুষ। তাঁর কাছে থাকলে কখনোই খারাপ লাগবে না। কিন্তু এটাও সত্যি, মাঝেমধ্যেই তিনি বিষাদগ্রস্ত হতেন, বিষণ্নতা রোগে ভুগতেন। একবার নিউইয়র্কে তাঁর প্রায় সব টাকা চুরি হয়ে গেল, তখন তিনি খুবই ভেঙে পড়েছিলেন। আমার মনে হয় এই চুরির কাজটি করেছিল গোয়েন্দারা, তারা ভালোদিয়ার মন খারাপ করে দিতে চেয়েছিল। আর তখনই তাঁর তথাকথিত ‘প্রেমে দিওয়ানা’ লিলিয়া ব্রিক টাকা চেয়ে মায়াকোভ্স্কির কাছে একটা টেলিগ্রাম পাঠালেন। মা সব সময়ই বলতেন, ওই মহিলার হৃদয়টা ছিল বরফের মতো শীতল। বিদায়বেলায় ভালোদিয়া মায়ের বালিশের ওপর একগোছা ফুল রেখে গিয়েছিল। বাবা তাঁর শেষ ডলারটি খরচ করেছিল এই ফুলের পেছনে।
কবিরা গরিব হয়, তার ওপর তাঁরা তো একেবারেই বাস্তববুদ্ধিবিবর্জিত, আকাশে চড়ে বেড়ায়। মায়াকোভ্স্কি যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে টাকা পাঠাতেনও, আমরা তা পেতাম বলে মনে হয় না। আপনার তো সে সময়ের নিউইয়র্ক সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। নিউইয়র্কে তখন এক পয়সার জন্যও খুন হতো। পোস্টঅফিস থেকে মনিঅর্ডারের টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরা যেত না। তবে কথা সেটা না। মা বহু আগে আমাকে বলেছিলেন, ‘ভালোদিয়াকে কোনো কারণেই দোষ দিবি না।’
জাতোফ: আপনি কি বিশ্বাস করেন যে আপনার বাবা আত্মহত্যা করেছেন?
ইয়েলেনা: আমার মনে হয় না বাবা স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করেছেন। সম্ভবত তাঁর বিষণ্নতা ও অন্যান্য মানসিক চাপকে কাজে লাগিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তাঁকে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। সরকার তার প্রদর্শনী বন্ধ করে দিয়েছিল, কেউ চাইলেই তার কাজ দেখতে যেতে পারত না। এ ধরনের ঘটনায় মায়াকোভ্স্কি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। এ কাজগুলোর সহজ বার্তা তো আর কিছুই নয়, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘চুপ কর’। স্তালিন আসলে মায়াকোভ্স্কির জন্য দুটো মাত্র পথ খোলা রেখেছিলেন, হয় মরো নতুবা কীট হয়ে বেঁচে থাক। হতে পারে, তিনি নিজেই এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছিলেন ঘটনাটিকে, কিন্তু তাঁকে এ পর্যন্ত আসতে বাধ্য করল কে? আর যাই হোক, ভেরোনিকা পোলানস্কায়াকে (মায়াকোভ্স্কির আত্মহত্যার আগে তাঁর ঘর থেকে যে মেয়েটি বেরিয়ে গিয়েছিল) ভালোবাসার কারণে বাবা নিজের জীবন কেড়ে নিতে পারেন না, মায়াকোভ্স্কিকে চেনেন, জানেন, এমন যেকোনো নারীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেই নিশ্চিত হতে পারবেন। ১৯৯১ সালে আমি মাদাম পোলানস্কায়ার সঙ্গে দেখা করেছিলাম। অনেক কথা বলেছিলাম আমরা এবং এক সময় বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। সমস্যা তিনি নন, আসলে বাবা সরকারের ওপর খুবই বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন।
জাতোফ: এ তো অবাক কাণ্ড! তাঁকে তো ‘সাম্যবাদের কবি’ বলে আখ্যায়িত করা হয়!ইয়েলেনা: মায়াকোভ্স্কি ছিলেন বিপ্লবের কবি। ক্ষমতার চারপাশে জড়ো হওয়া অকর্মণ্য ধনী আর ক্ষমতাবান জার ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের তিনি ঘৃণা করতেন। পরবর্তীকালে, অনেক পরে তিনি বুঝতে পারলেন, স্তালিন কোনো অংশেই তাদের চেয়ে ভালো ছিলেন না।
জাতোফ: তাহলে তখন তিনি কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপনার মায়ের কাছে ফিরে গেলেন না?
ইয়েলেনা: বাবা মাকে খুবই ভালোবাসতেন…কিন্তু তিনি তাঁর চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন নিজের দেশকে। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্তালিনের মতো কাণ্ডই ঘটিয়ে চলেছে বুশ। ইরাক যুদ্ধ একটা মহাপাপ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব সময় ভাবে যে রাশিয়া তাদের শত্রু। অথচ তারা ভুলে যায় যে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের কোনোকালেই কোনো যুদ্ধ হয়নি। রাশিয়াকে আমেরিকা বুঝতে পারে না বলেই নতুন করে ‘শীতল যুদ্ধ’ শুরু হচ্ছে।
বাবা মাকে খুবই ভালোবাসতেন…কিন্তু তিনি তাঁর চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন নিজের দেশকে। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্তালিনের মতো কাণ্ডই ঘটিয়ে চলেছে বুশ। ইরাক যুদ্ধ একটা মহাপাপ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব সময় ভাবে যে রাশিয়া তাদের শত্রু। অথচ তারা ভুলে যায় যে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের কোনোকালেই কোনো যুদ্ধ হয়নি। রাশিয়াকে আমেরিকা বুঝতে পারে না বলেই নতুন করে ‘শীতল যুদ্ধ’ শুরু হচ্ছে।
জাতোফ: আমেরিকা নিয়ে লেখা আপনার বাবার বই কি আপনি পড়েছেন?
ইয়েলেনা: হ্যাঁ, পড়েছি। বাবা নিউইয়র্ককে ‘পীত দানব’ বলেছেন।
জাতোফ: আপনি কি তাঁর সঙ্গে একমত?
ইয়েলেনা: পুরোপুরি নয়। দূর থেকে দেখে নিউ ইয়র্কের কিছুই বোঝা যাবে না। এটা তো সাধারণ কোনো শহর নয়, এটা নিজেই একটা দেশ। আক্ষরিক অর্থেই নিউইয়র্ক পৃথিবীর টাকা বানানোর কেন্দ্র এবং এ শহরটা সব সময়ই এ রকম ছিল। কিন্তু বাবার জন্য তখন এ বিশ্বাস রাখাটাই সংগত ছিল যে টাকা বানায় পুঁজিপতিরা।
পুরোপুরি নয়। দূর থেকে দেখে নিউ ইয়র্কের কিছুই বোঝা যাবে না। এটা তো সাধারণ কোনো শহর নয়, এটা নিজেই একটা দেশ। আক্ষরিক অর্থেই নিউইয়র্ক পৃথিবীর টাকা বানানোর কেন্দ্র এবং এ শহরটা সব সময়ই এ রকম ছিল। কিন্তু বাবার জন্য তখন এ বিশ্বাস রাখাটাই সংগত ছিল যে টাকা বানায় পুঁজিপতিরা।
জাতোফ: আপনি রুশ ভাষায় কথা বলেনই না। কেন?
ইয়েলেনা: (দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) প্রথম যে ভাষায় আমি কথা বলি, সেটা ছিল রুশ। কিন্তু শৈশবে যখন আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে এলাম, তখনই শুরু হলো সমস্যা। আমার উচ্চারণে খুঁত থাকায় অন্য শিশুরা আমাকে টিটকারি মারতে লাগল। আমার রুশ ভাষা ধরে রাখার জন্য মা অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু আমি চেঁচিয়ে বলতাম, ‘রুশ ভাষা আমার কী দরকার? আমরা তো আর কখনোই রাশিয়ায় ফিরে যাব না।’ এখন বুঝতে পারি, আমি সে সময় বড় ভুল করেছি। ১৯৯১ সালে আমি প্রথমবারের মতো যখন রাশিয়ায় গেছি, তখন নতজানু হয়ে বসেছি রাশিয়ার মাটিতে এবং মাটিকে চুমু খেয়েছি।
জাতোফ: আপনার মা কখন আপনাকে জানালেন যে মায়াকোফ্স্কির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল?
ইয়েলেনা: তাঁর মৃত্যুর কিছুকাল আগে তিনি ব্যাপারটি আমাকে জানান। ‘ম্যানহাটনে মায়াকোভ্স্কি’ নামে আমি একটি বই লিখেছি। এরপর আমি মাকে জিজ্ঞেস করেছি, ‘ভালোদিয়া কি তোমাকে ভালোবাসত?’ আমি নিশ্চিত, আমার মা ছাড়া আর কোনো নারী বাবার জন্য নিজের জীবন এভাবে কষ্টে ভরিয়ে রাখেনি। আর্কাইভে দেখেছি প্যাড, সেখানে মায়াকোভ্স্কি বড় বড় অক্ষরে লিখেছেন ‘কন্যা’ শব্দটি। মায়াকোভ্স্কি কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবেসেছিলেন, সে নিয়ে এখন বিতর্ক হয়। এ বিতর্কে আমি জড়াতে চাই না। আমি শুধু জানি যে মায়াকোভ্স্কি আমার মাকে এবং আমাকে ভালোবাসতেন। আমার নানা ছিলেন জমিদার, তাঁকে রাশিয়া থেকে বিতাড়ন করা হয়েছিল। মায়ের বিয়ে হয়েছিল একজন ব্রিটিশ নাগরিকের সঙ্গে।…মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারটা মায়াকোভ্স্কির ক্যারিয়ারের জন্য সুখকর ছিল না। এটা বিশাল এক ট্র্যাজেডি, কিন্তু সে সময়টিতে তাঁরা চাইলেও একসঙ্গে থাকতে পারতেন না।
জাতোফ: আপনার মা লিলিয়া ব্রিক সম্পর্কে কী বলতেন?
ইয়েলেনা: মা লিলিয়া ব্রিককে ভয় পেতেন। লিলিয়া ব্রিক ছিলেন গোয়েন্দাদের লোক, এ সন্দেহ মায়াকোভ্স্কিও করতেন। ধারণা করতেন, তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপই লিলিয়া জানিয়ে দেন গোয়েন্দাদের। তবে হ্যাঁ, একটা সময় ছিল, যখন আমার বাবা মাদাম ব্রিকের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। এ সময় লিলিয়া ব্রিক কবির কাছ থেকে অনেক বড় আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। বলতে হয়, লিলিয়া খোলাখুলিই বলেছেন সব সময়, প্রেম বলতে সারা জীবন ছিল তাঁর ওসিপ ব্রিক, মায়াকোভ্স্কি নয়। বাবা যখন মারা যান, লিলিয়া ব্রিক তাঁর টেবিল থেকে আমার ছবিটি ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন: তাঁর কাছে কবির উত্তরাধিকারদের কোনো মূল্য ছিল না। কারণ, এই মহিলা মায়াকোভ্স্কির সব বইয়ের স্বত্বাধিকারী ছিলেন। বলা দরকার, মৃত্যুর কিছু সময় আগে লিলিয়া ব্রিক আমার মাকে খুঁজে বেড়িয়েছেন, কিন্তু কেন খুঁজেছিলেন আমি জানি না।
জাতোফ: কবি মায়াকোভ্স্কির জীবনে নারীরা কি অনুপ্রেরণা হয়ে এসেছিলেন?
ইয়েলেনা: এটা শুনতে বেশ রোম্যান্টিক মনে হয়, কিন্তু এর চেয়ে বোকা কথা আর হয় না। বাস্তবে এ ধরনের কোনো অনুপ্রেরণার অস্তিত্ব নেই। এটা স্রেফ গ্রিক পুরাকাহিনীর ব্যাপার-স্যাপার। আমার মা অনুপ্রেরণা ছিলেন না, লিলি ব্রিক তো নয়ই। মা একবার তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তুমি কবিতা লেখো কী করে? মায়াকোভ্স্কি উত্তর করেছিলেন: এটা আসলে নাইটিঙ্গেলের নিঃশ্বাস ছাড়া আর কিছু নয়। আকাশ থেকে কেউ কবিতার বাণী ছড়িয়ে দেয় না, কবিরা এ ধরনের রোম্যান্টিক অনুপ্রেরণা ছাড়াই লিখতে পারেন, নাইটিঙ্গেল পাখির নিঃশ্বাসও তাঁদের অনুপ্রেরণা হতে পারে।
জাতোফ: আপনি কি এখনো মনে মনে বাবার সঙ্গে কথা বলেন?
ইয়েলেনা: (কবির ছবির দিকে তাকিয়ে) হ্যাঁ। আমি এখনো তাঁর সঙ্গে কথা বলি। প্রতিদিন কথা বলি।
জাতোফ: তিনি কী বলেন?
ইয়েলেনা: বলেন, ‘শাবাশ মেয়ে’। আমি সব সময়ই তাঁকে ভালোদিয়া নামেই ডাকি…
১১/৫/২০০৭