রুশ থেকে অনুবাদ: জাহীদ রেজা নূর
রাস্তার কৌতুক
জাহীদ রেজা নূর
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২১
আজ হঠাৎ চোখ পড়ল রাস্তার কৌতুকের দিকে। আগেই বলেছি, রুশ দেশটাই রসিকতার কারখানা। সেখানে প্রতি মুহূর্তে তৈরি হয় নতুন রসিকতা। তাই আজ ট্রামলাইনের পাশের ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যারা নিজেদের মনের ক্ষোভ প্রকাশ করছে, তাদের দিকেই কান পাতব।
আমি ছিলাম রাশিয়ার ক্রাসনাদার শহরে। শহরটি রাশিয়ার একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে। এখানেই উত্তর ককেশাস। শহর থেকে কিছু দূর এগোলেই পাহাড় দেখা যায়। আর দেখা যায় কৃষ্ণসাগর। কৃষ্ণসাগর পাড়ে এসে স্থিত হয় রুশি ছাড়াও আর্মেনিয়ান, জর্জিয়ান আর আজারবাইজানের মানুষ। ফলে, এক ধরনের মিশ্র সংস্কৃতির মর্যাদা পেয়ে গেছে শহরটা। আর এখানে কসাকরা এখনো টিকে আছে। কুবান আর রস্তোভের কসাকদের কথা ছড়িয়ে আছে রুশ সাহিত্যে।
আমরা যখন সে দেশে সময় কাটিয়েছি, তখন কেবল সমাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে দেশ। গণতন্ত্র শব্দটা উচ্চারিত হচ্ছে বটে, কিন্তু কাকে বলে গণতন্ত্র—সেটা ছিল ধোঁয়াশার মতো। সে গল্প হবে আরেকদিন। আজ তো কান পেতেছি, এখনকার রাস্তায়।
সরকার নিয়ে নানা জল্পনা–কল্পনা রুশীদের একটা প্রিয় বিষয়। অভ্যাস হয়ে যাওয়ায় সব সময়ই সরকার সম্পর্কে কোনো কথা বলা মানেই সরকারের প্রশংসা করা। কারণ, সোভিয়েত যুগ থেকেই নাগরিকেরা জানত, দেয়ালেরও কান আছে।
কিন্তু ইদানীং একটু একটু করে সরকার সম্পর্কেও মুখ খুলছে মানুষ। কিন্তু তারা নিজেদের অজ্ঞাতনামা কিংবা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হিসেবে পরিচয় দিতে আগ্রহী।
যেমন ধরুন সরকার সম্পর্কে কোনো স্বাভাবিক কথা বলা। আপনার সামনে হেঁটে যাচ্ছে আন্তন, সের্গেই আর ইভান। আনমনে চলতে চলতে আপনার কানে এল, সামনে এই তিনজনের কারও মুখ থেকে বের হয়েছে এই বাক্যটি, ‘আরে জানিস, সরকার মানে হচ্ছে ইঞ্জিনে তেল দেওয়া। বেশি দিন তেল না দিলে তা দিন দিন খারাপ হতে থাকে!’ যে কেউ বুঝবে, তেল বলতে সেখানে গণতন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে। আপনি যদি ওদের কাউকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কে বলল কথাটা?’
দেখবেন, স্পিকটি নট। ওরা হেসে উড়িয়ে দেবে। বলবে, এটা আপনার স্বকপোলকল্পিত ভাবনা।
কিংবা ধরুন আপনি রাশিয়ায় স্বাধীন রাজনৈতিক বিশ্লেষক খুঁজতে চান। টক শোর পুকুরে ছিপ ফেলুন, দেখবেন এ রকম হাজারটা মাছ টোপ গিলছে। কিন্তু রাশিয়ায় সত্যিকার স্বাধীন রাজনৈতিক বিশ্লেষক কে হতে পারবে জানেন? হতে পারবেন আঙ্কেল ফেদিয়া, তবে তা কয়েক পেগ মদ খেয়ে পুরো মাতাল হয়ে যাওয়ার পর। এর আগে—নেভার!
গণতন্ত্রের ব্যাপারে যদি সত্যিই প্রশ্ন জাগে মনে, তাহলে তার প্রকাশ করতে হবে একেবারে নিজের কানে কানে। যেমন, এ কথা বলা যেতেই পারে, সত্যিকার গণতন্ত্রের মানে এই না যে, গাধাদের নির্বুদ্ধিতার মূল্য দিতে হয় দেশের নাগরিকদের, বর্তমান গণতন্ত্রের মানে হচ্ছে প্রত্যেক গাধাই নিজের ভুলের মাশুল দিচ্ছে।
এ রকম নির্মম কথা রুশেরা বলে অবলীলায়। শুধু কে কথা বলল, তাকে কখনোই চিনতে পারবেন না।
আপনারা বলবেন, এবার যা বলা হবে, সেটা শুনে হাসি পাচ্ছে; কিন্তু আমি প্রতিটা শব্দের ভেতর শুনতে পাচ্ছি কান্না। বাক্য দুটো বলি:
রাজনীতিবিদরা বলছেন, ‘আমরা খুব ভালো আছি এখন!’
জনগণ বলছে, ‘আপনারা ভালো আছেন দেখে আমাদের খুব ভালো লাগছে।’
মাতাল হওয়ার পরই শুধু এরা রাজনীতি ও শাসক নিয়ে মন খুলে কথা বলে
আজ হঠাৎ চোখ পড়ল রাস্তার কৌতুকের দিকে। আগেই বলেছি, রুশ দেশটাই রসিকতার কারখানা। সেখানে প্রতি মুহূর্তে তৈরি হয় নতুন রসিকতা। তাই আজ ট্রামলাইনের পাশের ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যারা নিজেদের মনের ক্ষোভ প্রকাশ করছে, তাদের দিকেই কান পাতব।
আমি ছিলাম রাশিয়ার ক্রাসনাদার শহরে। শহরটি রাশিয়ার একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে। এখানেই উত্তর ককেশাস। শহর থেকে কিছু দূর এগোলেই পাহাড় দেখা যায়। আর দেখা যায় কৃষ্ণসাগর। কৃষ্ণসাগর পাড়ে এসে স্থিত হয় রুশি ছাড়াও আর্মেনিয়ান, জর্জিয়ান আর আজারবাইজানের মানুষ। ফলে, এক ধরনের মিশ্র সংস্কৃতির মর্যাদা পেয়ে গেছে শহরটা। আর এখানে কসাকরা এখনো টিকে আছে। কুবান আর রস্তোভের কসাকদের কথা ছড়িয়ে আছে রুশ সাহিত্যে।
আমরা যখন সে দেশে সময় কাটিয়েছি, তখন কেবল সমাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে দেশ। গণতন্ত্র শব্দটা উচ্চারিত হচ্ছে বটে, কিন্তু কাকে বলে গণতন্ত্র—সেটা ছিল ধোঁয়াশার মতো। সে গল্প হবে আরেকদিন। আজ তো কান পেতেছি, এখনকার রাস্তায়।
সরকারি সংবাদ সম্মেলন শেষে বাস্তবে ফেরা যে কী কঠিন!
সরকার নিয়ে নানা জল্পনা–কল্পনা রুশীদের একটা প্রিয় বিষয়। অভ্যাস হয়ে যাওয়ায় সব সময়ই সরকার সম্পর্কে কোনো কথা বলা মানেই সরকারের প্রশংসা করা। কারণ, সোভিয়েত যুগ থেকেই নাগরিকেরা জানত, দেয়ালেরও কান আছে।
কিন্তু ইদানীং একটু একটু করে সরকার সম্পর্কেও মুখ খুলছে মানুষ। কিন্তু তারা নিজেদের অজ্ঞাতনামা কিংবা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হিসেবে পরিচয় দিতে আগ্রহী।
যেমন ধরুন সরকার সম্পর্কে কোনো স্বাভাবিক কথা বলা। আপনার সামনে হেঁটে যাচ্ছে আন্তন, সের্গেই আর ইভান। আনমনে চলতে চলতে আপনার কানে এল, সামনে এই তিনজনের কারও মুখ থেকে বের হয়েছে এই বাক্যটি, ‘আরে জানিস, সরকার মানে হচ্ছে ইঞ্জিনে তেল দেওয়া। বেশি দিন তেল না দিলে তা দিন দিন খারাপ হতে থাকে!’ যে কেউ বুঝবে, তেল বলতে সেখানে গণতন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে। আপনি যদি ওদের কাউকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কে বলল কথাটা?’
দেখবেন, স্পিকটি নট। ওরা হেসে উড়িয়ে দেবে। বলবে, এটা আপনার স্বকপোলকল্পিত ভাবনা।
কিংবা ধরুন আপনি রাশিয়ায় স্বাধীন রাজনৈতিক বিশ্লেষক খুঁজতে চান। টক শোর পুকুরে ছিপ ফেলুন, দেখবেন এ রকম হাজারটা মাছ টোপ গিলছে। কিন্তু রাশিয়ায় সত্যিকার স্বাধীন রাজনৈতিক বিশ্লেষক কে হতে পারবে জানেন? হতে পারবেন আঙ্কেল ফেদিয়া, তবে তা কয়েক পেগ মদ খেয়ে পুরো মাতাল হয়ে যাওয়ার পর। এর আগে—নেভার!
গণতন্ত্রের ব্যাপারে যদি সত্যিই প্রশ্ন জাগে মনে, তাহলে তার প্রকাশ করতে হবে একেবারে নিজের কানে কানে। যেমন, এ কথা বলা যেতেই পারে, সত্যিকার গণতন্ত্রের মানে এই না যে, গাধাদের নির্বুদ্ধিতার মূল্য দিতে হয় দেশের নাগরিকদের, বর্তমান গণতন্ত্রের মানে হচ্ছে প্রত্যেক গাধাই নিজের ভুলের মাশুল দিচ্ছে।
এ রকম নির্মম কথা রুশেরা বলে অবলীলায়। শুধু কে কথা বলল, তাকে কখনোই চিনতে পারবেন না।
আপনারা বলবেন, এবার যা বলা হবে, সেটা শুনে হাসি পাচ্ছে; কিন্তু আমি প্রতিটা শব্দের ভেতর শুনতে পাচ্ছি কান্না। বাক্য দুটো বলি:
রাজনীতিবিদরা বলছেন, ‘আমরা খুব ভালো আছি এখন!’
জনগণ বলছে, ‘আপনারা ভালো আছেন দেখে আমাদের খুব ভালো লাগছে।’
ঘুষ খাওয়ার পর হাত পরিষ্কার রাখুনঘুষ খাওয়ার পর হাত পরিষ্কার রাখুন
কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন বলে, পেনশনভোগীদের সাহায্য করা সময়সাপেক্ষ, তবে কোটিপতিদের জন্য ঋণের দরজা খোলা—তখনো জনগণ একইভাবে বলে, ‘আপনারা ভালো থাকুন।’
আমাদের দেশের মতোই রাশিয়াতেও কিছু মানুষ আছে, যারা ঘরে অলস সময় কাটায় এবং ফেসবুকে রেখেঢেকে বিপ্লব করে। তার পোস্টে নতুন বিপ্লবীদেরও দেখা পাওয়া যায় মন্তব্যের ঘরে। রাশিয়ায়ও একই ব্যাপার, সেখানে তো বলাই হয়, সোফায় কাত হয়ে শুয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা সবচেয়ে সোজা।
তালেবান যখন ক্ষমতায় এল, তখন রাস্তার কৌতুকে আফগানিস্তানও জায়গা করে নিয়েছিল। শ্লেষ মাখা কিছু কথাও শোনা গেছে তখন। তারই একটা এ রকম, ‘তালেবান জানিয়েছে, তাদের দেশ এখন সবচেয়ে নিরাপদ দেশ।’ এর পর রুশ খুনসুটি, ‘এর কারণ বোধ হয় এই যে, নারীদের গাড়ি চালাতে নিষেধ করেছে তালেবান। তাই নিরাপদ হয়ে গেছে দেশ!’
কখনো কখনো কোনো কোনো রুশ নাগরিক সাহসী হয়ে কিছু কথা বলে ফেলে। খুব বেশি গায়ে না লাগলে সরকার তাকে সহ্য করে। যেমন, নিচের এই কথা যিনি বলেছেন, তিনি এখনো গ্রেপ্তার হননি:
দেশে স্কুল গড়ে দিলে, হাসপাতাল নির্মাণ করলে কিংবা সেতু গড়ে দিলে রাজনীতিবিদদের বাহবা দেওয়ার মানে হলো রাষ্ট্রের টাকায় পোদ্দারি করাকে বাহবা দেওয়া। ব্যাংক থেকে নিজের চেক দিয়ে নিজের টাকা তোলার জন্য ব্যাংককে আর এ সব কাজের জন্য রাজনীতিবিদদের বাহবা দেওয়া একই কথা।
ন যারা যুবক, তাদের অনেকেই শৈশব কাটিয়েছে সোভিয়েত শাসনামলে। তাদের কেউ কেউ এখনো বলে, ‘আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন রাজনীতিবিদদের বিশ্বাস করতাম আর কমেডিয়ানদের কথায় হাসতাম। আর বড় হয়ে এখন আমি রাজনীতিবিদদের কথায় হাসি আর কমেডিয়ানদের কথা বিশ্বাস করি।
দুর্নীতিবাজদের কথা তো হরহামেশাই আসে রাস্তার আলোচনায়। তবে আপনি শুধু ট্রাফিক পুলিশ নিয়ে একটা নিরপরাধ রসিকতার মধ্যেই অনেক কিছু পেয়ে যাবেন। রসিকতাটা হলো এ রকম, ‘রাস্তায় যদি কোনো ট্রাফিক সার্জেন্টকে ঘুষ নিতে দেখেন এবং যদি সে ঘুষ নেওয়ার সময় ধরা পড়ে, তাহলে নিশ্চিত জানবেন, সে হচ্ছে শত্রু দেশের এজেন্ট। ধরা না পড়লে সে দেশপ্রেমিক ট্রাফিক সার্জেন্ট!’
‘পুলিশি রাষ্ট্র’ কথাটা খুব খারাপ কথা না। আসলে শেষবিচারে যেকোনো রাষ্ট্রই তো শান্তি বজায় রাখে লাঠির সাহায্যে, তাহলে পুলিশি রাষ্ট্রের দোষ কোথায়?
আবারও আফগানিস্তানের কথা দিয়ে আজকের কৌতুকের আয়োজন শেষ করি।
বাইডেন সরকার নাকি ঘোষণা করেছে, আফগানিস্তানের সেই সব নাগরিকদের কোনো প্রশ্ন ছাড়াই মার্কিন নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, যারা প্লেনের পাখায় করে মার্কিন দেশে পৌঁছেছেন।
রুস্কি চুট্স্কি
ছাগল রাশির স্বামী
জাহীদ রেজা নূর
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২১, ১৮:৩৩
কৌতুকে রুশদের বিশ্বসেরার কাতারে ফেলা যায় অনায়াসে। সমাজ, রাজনীতি, দাম্পত্য—সবকিছুকেই তারা কৌতুকের চোখে দেখতে জানে। ছবি: পিক্সাবে ডটকমের সৌজন্যে
আমরা এবার স্বামী–স্ত্রী–বিষয়ক কৌতুকের দিকে যাব। রাজনীতিবিদদের নিয়ে কটাক্ষ করা হলে সবাই হাসে। সে কৌতুকে সমর্থন দেয়। কিন্তু নারী–পুরুষ নিয়ে কটাক্ষ করলে উভয় লিঙ্গের মানুষই করতে থাকে প্রতিবাদ। সেই প্রতিবাদ যেন কম আসে, সে জন্যই কিছু আপাত নির্দোষ কৌতুক দেওয়া গেল এখানে।
১.
বিয়ের পর থেকেই লেনা বলতে থাকল, আমি চাই ঘরভরা সন্তান। প্রতিদিন অন্তত ২২ বার বলত।
আন্তন তখন এমন এক বাড়ি ভাড়া নিল, যার নিচতলায় ছিল কিন্ডারগার্টেন। যখন কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চারা এক ঘণ্টার জন্য ঘোরাঘুরি করত বাড়ির সামনের লনে, চিৎকার–চ্যাঁচামেচি করত, তখন নিজের ব্যালকনিতে লেনাকে নিয়ে চা খেতে বসত আন্তন।
ঠিক দু সপ্তাহের মধ্যেই ঘরভরা সন্তানের কথা বলা বন্ধ করে দিল লেনা।
২.
এক কথায় প্রকাশ করো—
‘যে স্ত্রী তার স্বামীকে পেটায়।’
‘খাণ্ডারনি।’
‘যে স্বামী তার স্ত্রীকে পেটায়।’
‘শিক্ষক।’
৩.
‘আমার আর আমার স্ত্রী—দুজনেরই বয়স হয়ে গেছে পঞ্চাশের ওপরে। আমার মাঝেমধ্যে মনে হয়, এখনো যদি বিশ বছর বয়সী সেই চপল হরিণীটিকে পাশে পাই!’
‘আরে গাধা, তাহলে ওর পাশে বিশ বছর বয়সী একটা হরিণই মানাবে, তোর মতো গাধা নয়!’
৪.
স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে কথোপকথন
‘ওলিয়া, পুরুষদের কোন বিষয়টি তোমার সবচেয়ে ভালো লাগে?’
‘বুদ্ধি।’
‘তারপর?’
‘তার বাহ্যিক রূপ।’
‘তারপর?’
‘তার স্মার্টনেস।’
‘তারপর?’
‘তার চলন–বলন।’
‘তারপর?’
‘তার রসিকতা।’
‘তারপর?’
‘তার শরীরের শক্তি।’
‘তারপর?’
‘শোনো, আর ভড়ং কোরো না। আমি কিন্তু ধৈর্যহারা হয়ে যাচ্ছি। আর একটা শব্দ যদি উচ্চারণ করো, তাহলে কিন্তু আমি আসলেই পুরুষের কাছে কী চাই, চিৎকার করে সে সত্য ফাঁস করে দেব।’
৫.
‘আপনার চোখের নিচে আঘাতের চিহ্ন কেন?’
‘মানুষকে ভালোবাসার ফল। আমি একজন ডুবন্ত মেয়েকে পানি থেকে উঠিয়ে আনছিলাম, আর তখনই আমার স্ত্রী আসে এবং আমাকে আঘাত করে।’
‘নাহ! আপনার স্ত্রী পাষাণ হৃদয়ের। একজন ডুবন্ত মানুষকে উদ্ধার করছিলেন আপনি। আর সে কিনা আপনাকে মারল? তা কোথা থেকে উদ্ধার করছিলেন মেয়েটাকে। নদী না সমুদ্র থেকে?’
‘আমাদের বাড়ির বাথটাব থেকে।’
৬.
তোমার স্বামী কোন রাশির?
ছাগল রাশির।
দূর! ছাগল রাশি বলে কিছু নেই।
রাশি নেই, কিন্তু স্বামী আছে।
৭.
‘বরের জন্য রান্নাবান্না করিস?’
‘না।’
‘কেন? বর কি ভালো–মন্দ কিছু খেতে চায় না?’
‘না। আমার মনে হয়, খাওয়ার ব্যাপারে ওর কোনো আগ্রহ নেই।’
‘তাহলে তোর বাড়িতে এত রান্নার বই কেন?’
‘বর কেন যে আমাকে এত এত রান্নার বই উপহার দেয়, সে তো বুঝি না।’
৮.
‘ডাক্তার। বড় সমস্যায় পড়েছি। ছেলেবেলা থেকেই আমার স্বামী বাচ্চা জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। আমাকে বলুন তো, আমাদের যে তিনটি সন্তান আছে, তাদের কেউ কি আমার স্বামীর মতো হতে পারে?’
৯.
বিয়ে মানে কী?
‘বিয়ে মানে হচ্ছে, একবার আপনার হবু বউকে নাচের আমন্ত্রণ জানাবেন। বাকি জীবনটা সে আপনাকে নাচিয়ে বেড়াবে।
১০.
আদর্শ পরিবারে স্ত্রী জানে না টাকার স্রোত কোন পথে আসছে, আর স্বামী জানে না সেই টাকা কোন পাথে খরচ হচ্ছে।
১১.
রেগেমেগে স্ত্রী বলছে স্বামীকে, ‘তুমি একটা যাচ্ছেতাই। ইংরেজি কিউ বর্ণটির মতো!’
‘মানে!’
‘মানে আর কী? একটা বিশাল শূন্য, মাথা–মগজ নাই, আছে শূন্যের মধ্যে একটা ছোট্ট লেজ!’
‘আয় আমরা প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট খেলি’
জাহীদ রেজা নূর
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২১, ২০:১৩
আবার ফিরে আসতে হলো রাজনৈতিক রসিকতায়। আবার বলতে হচ্ছে, রুশ দেশের মানুষেরা রাজনীতি আর পারিবারিক রসিকতা যেগুলো করে, সেগুলো সহ্য করার মতো মানসিকতা আমাদের দেশের মানুষদের আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিশেষ করে, পারিবারিক জোকসগুলোকে এ যুগের নারীবাদীরা যে চোখে দেখে থাকে, রুশ দেশের কোনো নারী বা পুরুষ সে চোখে দেখে না। নিছক মজা পাওয়ার জন্য তারা কিছুটা জায়গা রাখে, যেখানে নিশ্চিন্তে নিশ্বাস ফেলা যায়।
সে যা হোক। পারিবারিক রসিকতা নিয়ে অন্য একদিন কথা বলা যাবে। আজ আমরা চেষ্টা করব রসিকতাগুলো প্রেসিডেন্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে।
১.
প্রেসিডেন্টের মতে, দেশে দক্ষ শ্রমিকের অভাব আছে।
শ্রমিকদের মতে, দেশে দক্ষ প্রেসিডেন্টের অভাব আছে।
২.
জার আর প্রেসিডেন্টের মধ্যে পার্থক্য কী?
জার জানত, যদি সে দেশে লুটপাট চালায়, তাহলে তার ছেলেমেয়েদের জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
প্রেসিডেন্ট জানে, যদি সে দেশে লুটপাট না চালায়, তাহলে তার ছেলেমেয়েদের জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
৩.
রবিনহুড বড়লোকদের ধনসম্পত্তি লুট করে গরিবদের দিয়ে দিত। তাই সে প্রেসিডেন্ট হতে পারেনি। যদি গরিবের টাকা মেরে বড়লোকদের দেওয়ার ব্যবস্থা করত, তাহলে ঠিকই প্রেসিডেন্ট হতে পারত।
৪.
‘মিখাইল সামুয়েলোলিচ, গতকাল প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আমাদের সবকিছু ভালোভাবে চলছে।
‘ঠিক বলেছ, শুরা। একদিক থেকে ভাবলে সেটা ঠিক। আরেকদিক থেকে ভাবলে ঠিক নয়।’
‘আরেকদিক থেকে মানে?’
‘ওইদিকে তো প্রেসিডেন্ট, আরেকদিকে জনগণ।’
৫.
এক স্কুলে রচনা লিখতে দিল—‘যদি আমি একদিনের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হতাম’।
গাধা নাকি! কী করে এ ধরনের প্রশ্ন মাথায় আসে এদের? রাশিয়ায় কি কেউ একদিনের জন্য প্রেসিডেন্ট হয়? দেখাতে পারবে কেউ সে রকম প্রেসিডেন্ট?
৬.
দুটো শিশু খেলছে।
‘আয় আমরা প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট খেলি।’
‘সেটা আবার কেমন খেলা?’
‘আমি তোর সব খেলনা কেড়ে নেব, আর তুই মাথা ঝাঁকিয়ে বলবি, ধন্যবাদ, ধন্যবাদ!’
৭.
এক বন্ধু অন্য বন্ধুকে বলছে, ‘চুরির দায়ে দক্ষিণ কোরিয়া আর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টকে জেল খাটতে হচ্ছে…’
‘কী বলতে চাস তুই? ওই দুই প্রেসিডেন্ট চুরির ‘চ’ও জানে না বলে ধরা পড়েছে। বেশি চুরি করলে কি আর ধরা পড়ত? কেউ পড়ে?’
৮.
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোর গলায় বক্তৃতা করছেন—‘এবার আমরা নতুন সংকট উতরে যাওয়ার সব প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ খুবই ভালো অবস্থায় আছে। আমরা কোনো চাপে ভেঙে পড়ব না।’
মিলনায়তন থেকে একটি চিকন কণ্ঠস্বর শোনা গেল, ‘আপনারা ভেঙে পড়বেন না বুঝলাম, আমাদের কী হবে?’
৯.
‘আমাদের প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে আপনার মত কী?’
‘ওকে তো আমি নেশাগ্রস্ত অবস্থা ছাড়া দেখিনি।’
‘কী বলছেন আপনি? তিনি তো মদ্যপান করেন না!’
‘তার কথা কে বলল? আমি তো আমার কথা বলছি!’
১০.
ফরাসি প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘মধ্যপন্থার মানে কী?’
‘খুব সহজ জিনিস। কল্পনা করুন, বাইডেন, পুতিন আর আমি এক বিছানায় ঘুমানোর জন্য শুলাম। আমাদের দেওয়া হলো একটা মাত্র কম্বল। আমি শুলাম মাঝখানে। গভীর রাতে দেখলাম, পুতিন একদিক থেকে কম্বল ধরে টানছেন, বাইডেন আরেকদিক থেকে। আমি চুপচাপ মাঝখানে শুয়ে রইলাম। তার মানে হলো আমি মধ্যপন্থী।’
১১.
এখন যখন আমাদের দেশে গণতন্ত্রের রমরমা, তখন প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করার জন্য বুদ্ধি, কৌশল কিছুই লাগে না, শুধু প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে অনুমতি নিলেই হয়…
১২.
এক ছদ্মবেশী মাতাল বলল, ‘বছরের পর বছর একই মুখ দেখতে দেখতে বউকেই পছন্দ হয় না, আর প্রেসিডেন্ট! হুহ!’