তুষারকন্যা | জাহীদ রেজা নূর
তুষারকন্যা

লেখাটি শেয়ার করুন

Share on facebook
Share on linkedin
Share on twitter
Share on email


রুশদেশের উপকথা
অনুবাদ: জাহীদ রেজা নূর

এক ছিল বুড়ো আর এক ছিল বুড়ি। ভালোই তো ছিল তারা সুখে–শান্তিতে। একটাই দুঃখ ছিল তাদের। কোনো ছেলে মেয়ে ছিল না। তুষারপাতের মধ্য দিয়ে শীতকাল চলে এল। বরফ জমল কোমর সমান। বাচ্চারা বেরিয়ে গেল রাস্তায়, খেলবে বলে। বুড়ো–বুড়ি জানালায় দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল আর নিজেদের ছেলে মেয়ে নেই বলে আফসোস করতে লাগল।

tushar

‘শোনো, বুড়ি, আমরা এই তুষার থেকেই আমাদের একটা মেয়ে বানিয়ে ফেলি।’ বলল বুড়ো।
‘আসো, বানাই।’ বলল বুড়ি।

টুপি মাথায় দিল বুড়ো, বাড়ির পিছনের বাগানটায় গেল তারপর তুষার হাতে নিয়ে বানাতে থাকল তুষার কন্যা। শরীর বানাল, হাত বানাল, পা বানাল, তারপর বানাল মাথা। নাক, ঠোঁট আর থুতনিও বানানো হয়ে গেল।

বরফ দিয়ে বানানো পুতুলটার দিকে তাকাতেই বুড়ো দেখল, মেয়েটার ঠোঁট হয়ে উঠছে গোলাপি, চোখ খুলে পিটপিট করে তাকাচ্ছে সে। তারপর বুড়োর দিকে তাকিয়ে হাসছে! তারপর মাথা ঝাঁকিয়ে, হাত নেড়ে, পা নেড়ে একটা জীবন্ত মেয়ে উঠে বসল।
দারুণ খুশি হলো বুড়ো–বুড়ি। বাচ্চাকে নিয়ে এল তাদের কুঁড়েয়। তুষারকন্যার দিক থেকে চোখ আর সরে না তাদের।

বুড়ো–বুড়ির কুঁড়েয় বেড়ে উঠতে লাগল তুষারকন্যা। আর বাড়তে লাগল ঘণ্টায় ঘণ্টায়। যত বড় হয়, তত সুন্দরী হয়। তুষারের মতো সাদা, কোমর পর্যন্ত চুল। তুষারকন্যাকে খুব ভালো বেসে ফেলল বুড়ো–বুড়ি।

মেয়েটা বুদ্ধিমতী, মেয়েটা আমুদে। যে কাজে হাত দেয়, সে কাজই সুন্দরভাবে শেষ করতে পারে। আর গান যখন গায়, তখন ঘরটা ভরে যায় আনন্দে।

শীত শেষ হয়ে এল। বসন্তের সূর্য প্রখর হতে থাকল। মরা ঘাসগুলো আবার সবুজ হয়ে উঠতে লাগল। পাখিরা গাইতে লাগল গান। তুষারকন্যার মন বিষন্ন হয়ে গেল।
‘কী হয়েছে তোর, মা?’ বুড়ো–বুড়ি জিজ্ঞেস করল তুষারকন্যাকে।
‘কিছুই হয়নি মা, কিছুই হয়নি বাবা। আমি ভালো আছি।’ বলল তুষারকন্যা।
শেষ তুষারটাও ঝরে গেল। বাগানজুড়ে ফুলের মেলা, পাখিরা গানে গানে ভরিয়ে তুলল আকাশ–বাতাস।
আর প্রতিদিনই একটু একটু করে তুষারকন্যার মন খারাপ হচ্ছে। সূর্য দেখলেই পালিয়ে বেড়াচ্ছে সে। ইস! একটু যদি ঠাণ্ডা থাকত, ইস! একটু যদি বৃষ্টি পড়ত!

একদিন আকাশে দেখা দিল কালো মেঘ। শিল পড়তে শুরু করল আকাশ থেকে। দারুণ খুশি হয়ে উঠল তুষারকন্যা। এক একটা শিল যেন হীরের টুকরো।
কিন্তু সূর্য ওঠার পরপরই গলে গেল সব শিল। তুষারকন্যা কাঁদতে লাগল। এত বেশি কাঁদল যে মনে হচ্ছিল, ও বুঝি আপন ভাইকে হারিয়ে ফেলেছে কোথাও!

বসন্ত শেষে এল গ্রীষ্ম। পাড়ার মেয়েরা জঙ্গলে যাবে ঘুরতে, তারা তুষারকন্যাকে ডাকল:
‘চলে আয় তুষারকন্যা, বনে যাব, গান গাইব, নাচব।’
বনে যাওয়ার ইচ্ছে নেই তুষারকন্যার। কিন্তু বুড়িমা বলল,
‘যা ওদের সঙ্গে। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গেলে মন ভালো হয়ে যাবে।’

তুষারকন্যাকে নিয়ে মেয়েরা এল বনে। ফুল কুড়ালো, ফুলের মালা মাথায় জড়ালো, গান গাইল। কিন্তু শুধু তুষারকন্যারই মন ভালো হয় না।

সন্ধ্যা হয়ে গেলে সবাই খড় জড়ো করে আগুন জ্বালালো। তারপর সেই আগুনের ওপর দিকে চলল লাফ দেওয়ার খেলা। তুষারকন্যাও লাফ দেওয়ার জন্য উঠল। তারপর লাফ দিল।

আগুনের ওপর লাফ দিতেই তুষারকন্যার শরীর গলে যেতে লাগল। ও তখন সাদা বরফের মেঘ। উড়তে উড়তে চলে গেল আকাশে।
বন্ধুরা অবাক। সবাই ওকে ডাকতে লাগল, ‘তুষারকন্যা, তুষারকন্যা!’
কিন্তু সে ডাক শুধু মনের মধ্যেই ঘুরপাক খেতে থাকল।
তুষারকন্যা আর ফিরে এল না।

ছবি এঁকেছেন: ম. মালকুস

আরও লেখা

তুষারকন্যা
শিশু ও কিশোর সাহিত্য

তুষারকন্যা

রুশদেশের উপকথাঅনুবাদ: জাহীদ রেজা নূর এক ছিল বুড়ো আর এক ছিল বুড়ি। ভালোই তো ছিল

krac
মুক্তিযুদ্ধ

হাফিজের চোখ

জাহীদ রেজা নূর হাফিজের কথা ভাবলে প্রথমেই মাথায় পুর্ণতা পায় একটা ছবি—একজন মানুষ চোখ বন্ধ

জাহিদ রেজা নূর । স্বপ্নের সারথি
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Scroll to Top