কেউ যদি ভেবে থাকেন. যে কোনো একটা ব্রিজ নিয়ে এই লেখাটা তৈরি হচ্ছে, তাহলে ভুল করবেন। কিংবা কেউ যদি ভেবে থাকেন, উইকিপিডিয়া কিংবা অন্তর্জালে খোঁজ নিলেই আত্মস্থ করতে পারবেন এই ব্রিজটিকে, তাহলেও ভুল করবেন। নিউইয়র্ক বিষয়ে তিন বকলম যখন স্রেফ ঠাণ্ডা হাওয়া আর ইস্ট রিভারের আকর্ষণকে সম্বল করে বলা নেই কওয়া নেই, সাবওয়েতে উঠে সিটি হল স্টেশন খুঁজতে থাকে, তখন বুঝতে হবে এ ব্রিজের আকর্ষণ অন্যরকম। সেই সঙ্গে যদি আপনি জেনে থাকেন, গোটা মার্কিন দেশের ইতিহাস ও স্থাপত্যের জন্য এই ব্রিজ মহামূল্যবান, তাহলে ধীরে ধীরে আপনি বুঝতে পারবেন আমরা যে ব্রুকলিন ব্রিজের কথা বলছি, তা এক কথায় অনন্য। পায়ে হেঁটে ব্রিজটি দেখার মতো আনন্দ হৃদয়ে দাগ কাটবেই।
আগে একবার মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টে যাওয়ার সময় আপ ট্রেন, ডাউন ট্রেন গুলিয়ে ফেলে কিছুদূর উল্টো গিয়ে শিক্ষা হয়েছিল। সে সময়ই জেনে নিয়েছিলাম, কি করে এফ ট্রেন নিয়ে কোথায় ট্রেন পরিবর্তন করে সিক্স ট্রেনের শেষ স্টেশন পর্যন্ত যেতে হবে। জানা হয়ে যাওয়ায় এবার আর ঝক্কি পোহাতে হয়নি।
শুরুতে নিউইয়র্ক বিষয়ে তিন বকলমের কথা বলছিলাম। মানে হলো, আমি, আমার কন্যা ও পুত্র—এই শহরে বেড়াতে আসা এই তিনজন কোনো নিউইয়র্কারের সাহায্য ছাড়াই চলে এসেছি ব্রুকলিন ব্রিজের কাছে। এবং হ্যাঁ, রাস্তার চিহ্ন দেখতে দেখতেই পৌঁছে গেছি ঠিক জায়গায়। তবে স্বীকার না করলে অপরাধ হবে, কীভাবে আসতে হবে সাবওয়েতে করে, সে বিদ্যা আমাদের মাথায় ভরে দিয়েছিল পলি, আমার ভাবী, নিউইয়র্কের বাসিন্দা। জিপিএস নামক সকল মুশকিল আসান যন্ত্র যখণ স্মার্ট ফোনে ঢুকে গেছে, তখন হারিয়ে যায়, সাধ্য কার?
আমরা যখন সিটি হল স্টেশন থেকে বের হয়ে ব্রুকলিন ব্রিজের দিকে যাচ্চ্ছি, তখনও জানা ছিল না, ব্রুকলিন থেকে ম্যানহাটনের দিকে যাচ্ছি নাকি ম্যানহাটন থেকে ব্রুকলিনের দিকে যাচ্ছি। এ কথা সবাই জানেন, ম্যানহাটন আর ব্রুকলিনকে এই সেতুই মিলিয়েছে। ইস্ট রিভারের ওপর গড়ে ওঠা সেতুটির জন্ম একশো বছরেরও আগে।
পথচারী পারাপার দিয়ে রাস্তা পেরিয়ে একটা সরু সড়ক চলে গেছে সেতুর দিকে। সেখানে লেখা আছে ‘কেবল পথচারী আর সাইকেলচালকদের জন্য।’ এই হন্টন–সড়কটি ধীরে ধীরে ওপর দিকে উঠতে শুরু করেছে। ডান আর বাঁ দিক দিয়ে গাড়ি চলছিল সমান্তরালে, কিছুক্ষণ পর দেখা গেল পথচারী ব্রিজটি একটু একটু করে উপরে উঠছে। গাড়িগুলো চলছে অনেক অনেক নিচ দিয়ে।
ব্রিজের শুরুতেই আমাদের ফুটপাতের দোকানের মতো কিছু দোকান। নিউইয়র্কের দ্রষ্টব্যের ছবি নিয়ে সস্তা দরের চুম্বক কিংবা নিউইয়র্কের অন্য কোনো স্মারক বিক্রি হচ্ছে এখানে। স্ট্যাচু অব লিবার্টির ভাস্কর্যও রয়েছে নানা আকারের। ঠাণ্ডা পানি, কোমল পানীয় বিক্রি করছিলেন কেউ কেউ। তাদের একজন যে দক্ষিণ ভারতের মানুষ, তা তাঁর দ্রুত ও দক্ষিণ ভারতীয় অ্যাকসেন্টের কারণে বোঝা যাচ্ছিল। কেউ কেউ বসে গেছেন আঁকার সরঞ্জাম নিয়ে। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ঢালবেন আর তৈরি হয়ে যাবে আপনার একটি ক্যারিকেচার। এ ধরনের আর্টের কারবার ইউরোপের বহু দেশে আছে। বাংলাদেশেও কোথাও কোথাও দেখেছি।
একটু হাঁটবার পরই পায়ের নিচের রাস্তাটি কাঠের রাস্তায় পরিণত হলো। এবং তা নয়নাভিরাম। রাস্তার মাঝখান দিয়ে সাদা দাগ। ডানদিক দিয়ে হাঁটবে মানুষ, বাঁ দিক দিয়ে চলবে সাইকেল। ব্রিজের নিচেই সাইকেল ভাড়া দেওয়া হয়। ব্রিজের এ মাথা থেকে ও মাথা সাইকেলে করে পাড়ি দেওয়ার মানুষও কম নয়। একটু পর পরই তাদের সাইকেলের ঘণ্টির আওয়াজ সতর্ক করছিল পথচারীদের।
ব্রিজে একটু পর পর লেখা আছে ‘তালা লাগাবেন না’। তারপর এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে আরো কিছু লেখা আছে। একটা ব্রিজের সঙ্গে তালা লাগানোর সম্পর্ক কী, বুঝতে পারিনি প্রথমে। পরে জানা গেল, অন্য অনেক ব্রিজের মতো এই ব্রিজকেও নিজেদের ভালোবাসার সাক্ষী করতে চায় প্রেমিক যুগল। ব্রিজে নিজেদের নাম লিখে একটা তালা ঝুলিয়ে চাবিটা ছুড়ে দেয় নদীতে। তাতে নাকি তাদের মনবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। প্রেমিক–প্রেমিকার এই মনাবাঞ্ছা পূরণের ক্ষেত্রে বাদ সেধেছে কর্তৃপক্ষ, এ কারণেই একটু পর পর তালার বিরুদ্ধে প্রচারণা।
এ পারের ঝকঝকে অট্টালিকাগুলো দেখে মনে হলো, এ পাশটাই ম্যানহাটন। ব্রিজ পার হয়ে যেদিকে নামব, সেদিকটায় ব্রুকলিন। কিন্তু ছেলে শৌনকের যুক্তিটিও ফেলনা নয়। ও বলল, ‘আমরা এসে নামলাম ব্রুকলিন ব্রিজ স্টেশনে। তাহলে তো এদিকটাই ব্রুকলিন হওয়ার কথা।’ কিন্তু একটু পরই আমরা বুঝতে পারি, আমি যা ভেবেছি, সেটাই ঠিক। ব্রিজের মাঝামাঝি আসার আগেই বহুদূরে ডানদিকে যখন হাডসন নদীর মুখে দেখা গেল বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ, যার ওপর এক হাতে মশাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক রমণী, তখন ম্যানহাটন কোনদিকে হবে, তা বুঝতে বাকি রইল না আর। স্ট্যাচু অব লিবার্টি দাঁড়িয়ে আছে লিবার্টি আইল্যান্ডে, আর আমরা ব্রিজের ওপর থেকে তাকে দেখছি, এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা। গত শীতে, জানুয়ারি মাসে এই রমণীকে দেখে গিয়েছিলাম। কনকনে ঠাণ্ডায় শরীর যাচ্ছিল জমে। এই গরমে মনে হলো, এখন সেখানে গেলে জমবে ভালো।
অন্তর্জালে পড়েছিলাম, ব্রুকলিন ব্রিজের ওপর সেলফি তুলতে গিয়ে আটক হয়েছে এক ব্যক্তি। এ শুধু শিরোনাম। খবরটা আর পড়া হয়নি। তাই ধারণা করে নিয়েছিলাম, ব্রিজটা দেখাই হবে কেবল, এখানে ছবি তোলা যাবে না—রইবে না স্মৃতিচিহ্ন কিছু। শুধু মনে মনেই জড়ো করে রাখতে হবে এই স্মুতি। ছবি তুললে হয়তো জরিমানা গুনতে হবে, আটকও থাকতে হতে পারে হয়তো। মেয়ে সনকা বলেছিল, পূর্বানুমতি ছাড়া ছবি তোলা নাকি বেআইনি।
কিন্তু মন তো মানে না। ছোট্ট দুটি পুলিশের গাড়ি দেখে এগিয়ে যাওয়ার সাহস হলো। জিজ্ঞেস করলাম, ‘এই ব্রিজে কি ছবি তোলা নিষেধ?’
একজন পুলিশ সদস্য বললেন, ‘যত খুশি তোলো।’
আমাদের মন তখন আনন্দে আত্মহারা! এতক্ষণ চোখে পড়েনি। ব্রিজের মাঝামাঝি আসতেই দেখলাম, যেন ছবি তোলার হিড়িক পড়েছে। স্মার্ট ফোন প্রত্যেকটা মানুষকে ফটোগ্রাফার করে তুলেছে। ডিজিটাল দুনিয়ায় ফিল্মের কারবার নেই। ৩৫টা স্ন্যাপ নেওয়া যাবে একটা ফিল্মে, তাই বুঝেশুনে খরচ করো—এ রকম দিন পেরিয়ে গেছে অনেক আগে। এ যুগের ছেলেমেয়েদের অনেকেই জানে না, সে রকম একটা সময় ছিল আমাদের। ওরা হয়তো ভাবতেই পারবে না, কোনো কালে সাদাকালো ফিল্মেও ছবি তোলা হতো।
ব্রিজে আসা মানুষদের লক্ষ্য করতে থাকি। নিউইয়র্কে মেক্সিকান বা আরেকটু বড় করে বললে হিস্পানিকদের সংখ্যা অনেক। ব্রিজে কিন্তু তাদের কম দেখলাম। ইউরোপিয় পর্যটেকরা ছিল, আর ছিল এশিয়ান আর আফ্রিকানেরা। তবে চেহারা–সূরতে বাঙালি কাউকে দেখেছি বলে মনে পড়ে না।
বাঙালি আমেরিকানদের যখন জিজ্ঞেস করেছি, ‘আচ্ছা, ব্রুকলিন ব্রিজে গেছেন?’
‘হ্যাঁ, গেছি।’ পেয়েছি উত্তর।
‘ব্রিজে হাঁটতে কেমন লেগেছে?’
‘হাঁটতে মানে? হেঁটে তো যাইনি। গাড়ি নিয়ে গেছি।’
শুধূ একজন বন্ধুই বলেছিল, সুযোগ পেলেই ও চলে আসে ব্রিজে। একা। হাঁটে। ব্রিজের মাঝখানে দাঁড়ায় কিছুক্ষণ। তারপর ফিরে আসে বাড়িতে।
আমরা যখন হাঁটছি, তখন চাঁদটা একটু একটু বড় হচ্ছে আর সূর্য ছড়াচ্ছে তার লাল আভা। সন্ধ্যা হবে একটু পর। রোদ একেবারেই নেই। ব্রিজের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমরা চলমান জনস্রোতের দিকে লক্ষ করলাম একটু।
ছবি তোলার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ মানুষের। নানা ভঙ্গিমায় নানা মানুষ ছবি তুলে চলেছে। দুই কোরিয়ান বন্ধু এসেছে। একে অন্যের ছবি তুলে পোষাচ্ছে না। ওরা সনকাকে অনুরোধ করল, ওদের ছবি তুলে দিতে। গিয়ে বসল ব্রিজের দেয়ালের ওপর। ছবি তোলা হলে কৃতজ্ঞতায় নতজানু হলো।
সেলফি স্টিকের গুরুত্ব বোঝা গেল এই এলাকায় এসে। বিশেষ করে একা আসা মেয়েরা সেলফি স্টিক দিয়ে নিজেদের ছবি তুলছে। আবার দল বেঁধে আসা মানুষও ছবি তুলছে সেলফি স্টিক দিয়ে।
একটু পরেই লক্ষ্য করলাম, ব্রুকলিনের দিক দিয়ে যদি ব্রিজ থেকে নামা হয়, তাহলে তার নিচেই আছে পার্ক। নদী–ঘেষা সেই পার্ক সত্যিই মনমুগ্ধকর। পুঁজিবাদী এই দেশে ডলার ছাড়া কিছুই হয় না বলে একটা ধারণা আছে আমাদের। কিন্তু কোনো কোনো জায়গা আছে, যার সঙ্গে টাকা–পয়সার কোনো লেনদেন নেই। এই নিউইয়র্কেই এত কিছু দেখার আছে বিনা খরচে, যার তালিকা বানালে অবাক হতে হয়। ম্যানহাটনকে তো আস্ত একটা মিউজিয়ামই বলা চলে। একটু একটু হাঁটলেই এক এক ধরণের রত্নরাজি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক এক জাদুঘর।
একটু খোঁজ খবর করতেই আমরা জেনে গিয়েছিলাম, এই ব্রিজটি তৈরি করতে লেগেছিল ১৪টি বছর। ব্রিজ তৈরির ব্যাপারে কিছু কাহিনী আছে। একটি স্বপ্নবান পরিবারের কাহিনী। সেটাও একটু বলে রাখা ভালো।
ম্যানহাটন আর ব্রুকলিনকে সেতুর মাধ্যমে মিলিয়ে দেওয়ার প্রথম ভাবনাটি আসে জন রবলিং–এর মাথায়। ১৮৬৯ সালে তিনি এই নিয়ে একটি প্রস্তাব দেন। তাঁর ভাবনাকে উড়িয়ে দেন অন্য বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু জেদী রবলিং নিজের ভাবনা থেকে নড়লেন না। ছেলে ওয়াশিংটন রবলিংকে নিয়ে পরিকল্পনা করলেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য একটা দল তৈরি করলেন। বাবা–ছেলে দুজনেই প্রকৌশলী হওয়ায় তারা কাজটায় আত্মনিয়োগ করতে পারলেন। স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন। কিন্তু বিধি বাম। ব্রিজ নির্মাণকালেই সেখানে এক দুর্ঘটনার পর জন রবলিং টিটেনাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবার জেদ ছেলের মধ্যে তো ছিলই, তাই তিনি কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। কাজটা খুব সহজ ছিল না্। ইস্ট রিভারে ডুবে ডুবে কাজ করায় অনেক শ্রমিক মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে থাকে।এই রোগের হাত থেকে ওয়াশিংটনও বাঁচেননি। তিনি চলাফেরায় অক্ষম হয়ে যান। শুধু একটি আঙুল দিয়ে কাজ করতে পারতেন তিনি তখন। চিকিৎসকেরা তাঁকে কাজ করতে মানা করলেন। কিন্তু ওয়াশিংটন সে কথা মানলেন না। স্ত্রী এমিলির সহযোগিতায় চালিয়ে গেলেন কাজ। ১৩ বছর ধরে এমিলি তাঁর স্বামীর কাজটা এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এবং শেষপর্যন্ত ব্রুকলিন ব্রিজ নির্মাণ কাজ শেষ করতে পেরেছেন।
১৮৮৩ সালের ২৪ মে দেশৈর প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ আর্থার ও মেয়র ফ্রাঙ্কলিন এডসন ম্যানহাটনের দিক থেকে এই ব্রিজের কাছৈ পৌঁছান। ব্রুকলিনের মেয়র সেথ লো যোগ দেন তাদের সঙ্গে। ওয়াশিংটন রবলিং আর এমিলীর বাড়িতে গিয়ে তাঁদের অভিনন্দন জানান চেস্টার এ আর্থার।
ব্রুকলিন ব্রিজের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর দুটি সুদৃশ্য টাওয়ার। গথিক স্টাইলে করা এই টাওয়ার দুটিই এই ব্রিজের মূল আকর্ষণ।ব্রিজটি ১.৮ কিলোমিটার লম্বা।
নেট ঘাটলেই পাওয়া যায়, এ রকম তথ্য আর না দিই। আমরা বরং ব্রিজের পথচারীদের নিয়ে কিছু বলি। আগেই বলেছি, সে দিনটায় ব্রিজে আমরা কোনো বাঙালি দেখিনি। গাড়িতে করে ব্রিজ পার হওয়া আর ব্রিজের ওপর দিয়ে হাঁটা যে এক কথা নয়, সেটা আমরা বুঝেছি। বুঝেছে চলমান জনস্রোত। এই ব্রিজের ওপর নিজের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য যে আকুলতা দেখেছি মানুষের, তাও বিস্ময়কর।
আরেকটা কথা বলে লেখাটা শেষ করি। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিখ্যাত কবি মায়াকোভস্কি ১৯২৫ সালে এসেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি ব্রুকলিন ব্রিজ নিয়ে যে কবিতাটি লিখেছিলেন, তা অনবদ্য। শ্রেণীবিভক্ত সমাজের শোষণের কথা উঠে এসেছে তাঁর কবিতায়, কিন্তু ব্রুকলিন ব্রিজের প্রতি ভালোবাসাও আছে কবিতাজুড়ে।